ডেস্ক রির্পোট-
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া মিয়া আরাফিকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে মিয়া আরাফিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কাশিমপুর কারাগারে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হারুন অর রশিদ জানান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দীর থেকে নম্বর সংগ্রহ করে ২৮ তারিখ সংবাদ সম্মেলনেরও আগে মিয়া আরাফি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, শিমুল বিশ্বাস, আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ একাধিক বিএনপি নেতার সাথে কথা বলেছেন। আরাফির যাতায়াত ছিল আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসভবনেও।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা, নির্মমভাবে পিটিয়ে পুলিশ সদস্যকে হত্যা, সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয়ে সংবাদ সম্মেলন এই সব কিছুরই আন্তঃসংযোগ রয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা স্বীকার করেছেন হাসান সারওয়ার্দী তাকে এসব কাজে প্ররোচিত করেছেন। তাকে এমন আশ্বাস দিয়েছেন, ভবিষ্যতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে তিনি নিজেও ভালো অবস্থানে যাবেন এবং মিয়ান আরাফিকেও লাভবান করবেন।
এ কাজটি যে তার করা ঠিক হয়নি তিনি এখন তা বুঝতে পারছেন। তিনি তার ভুল স্বীকার করেছেন বলেও জানান হারুন।
তিনি বলেন, হাসান সারওয়ার্দীকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু বিষয় পরিষ্কার হতে পারছিলেন না তারা। সে বিষয়গুলো পরিষ্কার হতেই কাশিমপুর কারাগারে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তারা।
মিয়া আরাফি বর্তমানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন। তবে একই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। মামলার আরেক আসামি বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন এখনও পলাতক আছেন।
গত ২৮ অক্টোবর (শনিবার) বিএনপির মহাসমাবেশের কর্মসূচির দিন আগুন ভাঙচুর আর নাশকতায় রণক্ষেত্র হয় কাকরাইল, বিজয়নগরের নাইটেঙ্গল মোড়, ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকা। বিএনপি কর্মীদের তাণ্ডবে তড়িঘড়ি হরতাল ঘোষণা করে সমাবেশ শেষ করে দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগেই কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই নয়াপল্টন এলাকা ত্যাগ করেন।
সেদিন সন্ধ্যায় বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন মিয়ান আরাফি নামের এই রহস্যপুরুষ। সঙ্গে কয়েকজন সহচর। সোজা ঢুকে যান নয়াপল্টন কার্যালয়ের ভেতর। তাকে অভর্থ্যনা জানান বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ইশরাক হোসেনসহ কয়েকজন। রহস্যমানব নিজের পরিচয় দেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বলে। পরিচয় পাওয়া যায় তার সঙ্গীদেরও। তাদের একজন বিতর্কিত সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দী।
কে এই আরাফি? অনুসন্ধান শুরু করে গণমাধ্যমগুলো। কোথাও মেলে না হদিস। কারও কাছে কোনো তথ্য নেই বাইডেনের কথিত উপদেষ্টার। এক পর্যায়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানায়, আরাফি নামে জো বাইডেনের কোনো উপদেষ্টা নেই। তিনি দূতাবাসের প্রতিনিধি নন। এমনকি দূতাবাস তাকে চেনেও না।
মার্কিন বিবৃতির অল্প পরেই বিএনপিও বলে আরাফির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ তাদের প্রধান কার্যালয়ে বসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দিব্যি কথা বলে গেছেন তিনি।
পরের দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আটক হন তিনি। আগের দিন পল্টন কার্যালয়ে দেয়া বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে দাবি করেন, ভুল বুঝিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিলো তাকে। বলেছেন শিখিয়ে দেওয়া কথা।