স্টাফ রিপোর্টার-
রাজনৈতিক কর্মসূচী, দূর্গাপূজা‘র টানা ধকলে ক্লান্ত পুলিশ। তবুও ছুটি মেলার ফুসরত নেই। সামনে জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ সদস্যদের ডিউটির হিসেব মেলাতে কষ্ট হচ্ছে। তাই আগামী কয়েক মাসের জন্য পুলিশ সদস্য‘দের ছুটি ভুলে যেতে হবে।
এদিকে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে যে কোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এরই মধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। পুলিশপ্রধান ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। নিরাপত্তা দায়িত্ব পালনের জন্য অতি প্রয়োজন ছাড়া ডিএমপি সদস্যদের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি নিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিএমপির পাশাপাশি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং আনসার সদস্যরাও প্রস্তুত থাকবেন বলে জানা গেছে। এর বাইরে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোতেও সতর্ক অবস্থানে থাকবে পুলিশ।
ডিএমপির ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিরাপত্তা সহায়তা দিতে প্রস্তুত পুলিশ। কিন্তু সমাবেশ ঘিরে যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়াতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কঠোর থাকবে তারা। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সড়কে তল্লাশি চৌকি জোরদারের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল ও সন্দেহজনক জায়গায় নজরদারি শুরু হয়েছে।
২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে বিএনপি। একই দিন আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে এবং জামায়াত শাপলা চত্বরে সমাবেশের আবেদন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দলই সমাবেশের অনুমতি পায়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপির উদ্দেশে বলেন, কমিশনার যদি মনে করেন বা তাকে যদি আশ্বস্ত করতে পারেন যে, অরাজক পরিস্থিতি এবং জনদুর্ভোগ তৈরি করবেন না, তাহলে আমার মনে হয় পারমিশন পাবে।
ডিএমপির একটি সূত্র জানায়, বিএনপি নয়াপল্টনে রাস্তার ওপর সমাবেশ করতে চাচ্ছে। সেখানে অনুমতি দিলে চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হবে। পুলিশ তা করতে পারে না। এজন্য দলটি বিকল্প ভেন্যুতে সমাবেশ করতে চাইলে, সেক্ষেত্রে পুলিশ ইতিবাচক হবে। সেটা গোলাপবাগ মাঠ হতে পারে। এর আগেও গত বছর ১০ ডিসেম্বর দলটি সেখানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছিল। তবে জামায়াতকে ওইদিন শাপলা চত্বরে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হবে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, পূজার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের কারণে এতদিন ২৮ অক্টোবর ঘিরে তেমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পুলিশ। তবে এখন ওই দিনের কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা অবনতি হতে পারে, এমন ব্যক্তিদের প্রতি নজরদারি শুরু হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযানও চালানো হতে পারে। এরই মধ্যে রাজধানীর বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ওই সূত্রটি জানায়, ঢাকার প্রবেশপথেও নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। ঢাকায় যাতে বাইরে থেকে এসে কেউ কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। যে কোনো মূল্যে ২৮ অক্টোবর ঢাকার নিরাপত্তা ঠিক রাখা হবে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এখনো বিএনপি সমাবেশের অনুমতি না পেলেও এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেছে। তবে এর আগে, বিভিন্ন সময়ে তারা নয়াপল্টনের আশপাশের আবাসিক হোটেলগুলোতে অবস্থান করলেও এবার এখনো ফাঁকাই আছে সেগুলো। নেতাকর্মীরা এবার তাদের স্বজনদের বাসাবাড়িতে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। ঢাকায় একই দিন বড় দুই দলের সমাবেশ ঘিরে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকবে। নিরাপত্তার পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জও আছে। এসব বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
ডিএমপির বিভিন্ন ক্রাইম বিভাগ ও জোনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিখিত নির্দেশ না দিলেও ২৮ তারিখ পর্যন্ত তাদের ছুটি না নিতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। তা ছাড়া সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।