ডেস্ক রিপোর্ট-
সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ফ্লাড লাইট জ্বলতে দেখে ট্যাক্সিচালক সাজিদ খানের কৌতূহলী প্রশ্ন, ‘ম্যাচ চলছে নাকি?’ ম্যাচ চলছে না, আগামী কদিনে এখানে বিশ্বকাপের ম্যাচ হবে। এবার তাঁর কৌতূহল আরও বেড়ে গেল। মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভ ধরে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের কাছে নামিয়ে দেওয়ার আগে তাঁর কাতর অনুরোধ, ‘কোনো টিকিটের ব্যবস্থা হবে?’
গতকাল ভারতীয় ক্রিকেটের ‘রাজধানীতে’ ঢুকতেই বোঝা গেল, বিশ্বকাপ আয়োজনের শেষ প্রস্তুতি চলছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সদর দপ্তর এখানে। আজ ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে মুম্বাইয়ের বিশ্বকাপযাত্রা। গতকাল দুই দলই ঝালিয়ে নিয়েছে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে।
ওয়াংখেড়েতে আসতে আরও এক দিনের অপেক্ষা বাংলাদেশের।
গতকাল সড়কপথে পুনে থেকে ৩ ঘণ্টার দূরত্বে মুম্বাইয়ে আসা সাকিবরা আজ থাকবেন বিশ্রামে। আগামীকাল বেলা ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাঁদের প্রথম অনুশীলন ভারতের এই বিখ্যাত ভেন্যুতে। আর তাতে লম্বা এক বিরতিরও অবসান হবে। ২৫ বছর পর বাংলাদেশ পা রাখতে যাচ্ছে ওয়াংখেড়েতে। এই মাঠে বাংলাদেশের সবশেষ এবং একমাত্র ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ১৯৯৮ সালের ২৫ মে।
ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ অলআউট ১১৫ রানে। মামুলি এ লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়েই ভারত ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। সেই দলের আতহার আলী খান ধারাভাষ্য দিতে এখন ভারতেই আছেন। টিম ডিরেক্টর হিসেবে খালেদ মাহমুদ সুজন আর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু আছেন দলের সঙ্গে।
২৫ বছর পর ওয়াংখেড়েতে নতুন গল্প লিখতে বাংলাদেশের সামনে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। উড়তে থাকা প্রোটিয়ারা কদিন আগে ধর্মশালায় নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের ক্ষত নিয়ে এসেছে মুম্বাইয়ে। আজ তাদের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডও ধাক্কা খেয়েছে আফগানিস্তানের মতো ‘মিনোসে’র কাছে হেরে। আজ দুই দলেরই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ।
রানপ্রসবা ওয়াংখেড়েতে সর্বোচ্চ ৪৩৮ রান করার রেকর্ড আছে। কোন দল করেছিল নিশ্চয় জানেন। ২০১৫ সালের অক্টোবরে ভারতকে সেই ম্যাচে ২১৪ রানে হারিয়েছিল। তার মানে, প্রোটিয়াদের ভালোই জানা, ওয়াংখেড়েতে কীভাবে রান উৎসব করতে হয়। আর সর্বনিম্ন রান? বাংলাদেশের, ওই ১১৫।
আরেকটি রানপ্রসবা উইকেট পেলে বাংলাদেশ কী করবে, এটিই আসল প্রশ্ন। পুনের রানে ভরা উইকেটে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত শুরুর পরও বাংলাদেশ টেনেটুনে ২৫০ পেরোনো স্কোর গড়েছে। ওই সামান্য চেষ্টার পরও ভারতের শীর্ষ পত্রপত্রিকা প্রশংসাতেই ভাসিয়েছে তানজিম তামিম ও লিটন দাসকে। টাইমস অব ইন্ডিয়া যেমন শিরোনাম করেছে, ‘তামিম জুনিয়র গ্র্যাজুয়েটস’।
অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবালের জায়গায় সুযোগ পাওয়া জুনিয়র তামিম যেভাবে আত্মবিশ্বাসী ইনিংস খেলছিলেন মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (এমসিএ) মাঠে, নিজেদের দলের জন্য শঙ্কিত হলেও ক্রিকেট রোমান্টিক হিসেবে মুগ্ধ চোখে দেখছিল ভারতীয়রা। বিশেষ করে শার্দুল ঠাকুরের করা দশম ওভারে টানা তিন বলে তামিমের ৬, ৪, ৬—টানা তিন বাউন্ডারি।
পরে জুনিয়র তামিম নিজেও আফসোস করেছেন এত সুন্দর শুরুর পরও ইনিংসটা লম্বা করতে না পারায়। বাংলাদেশের ব্যাটারদের সমস্যা তো এখানেই। হঠাৎ ধস কিংবা হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলার রোগ থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছেন না তাঁরা।
বাংলাদেশ টিম হোটেলে নিশ্চিতভাবে ওয়াংখেড়েতে ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দেখে নিজেদের করণীয় ঠিক করবে। মঙ্গলবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে খেলার আগে আবারও সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আসছে সামনে—অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের চোটের অগ্রগতি কী? গত পরশু ম্যাচ শেষে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘সেরে উঠছেন, ভালো অবস্থায় আছেন। আমরা আজকের (গতকাল) ম্যাচে তাঁকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাইনি। যেহেতু এরপর আরও পাঁচ ম্যাচ বাকি আছে। উন্নতির দিক থেকে অনেকটা ভালোই। আশা করছি, তিনি সামনের ম্যাচে খেলবেন।’