রংপুর সংবাদদাতা
রংপুর সদর হাসপাতাল সংলগ্ন সিভিল সার্জন ওয়ার্কশপ মাঠে খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের অ্যাম্বুলেন্সসহ ২২টি গাড়ি। বছরের পর বছর ধরে একই জায়গায় অযন্তে-অবহেলায় পড়ে থাকায় চুরি হয়ে গেছে এসব গাড়ির যন্ত্রাংশ। দীর্ঘদিনেও নিলামে বিক্রি করতে না পারায় সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশি সংস্থা আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই গাড়িগুলো নষ্ট হওয়ার পর মেরামত না করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে তা যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা গাড়িগুলো এখন প্রায় অকেজো। এসব যানবাহনের কোনোটি ১৫-২০ বছর আবার কোনটি ৩০-৩৫ বছর ধরে পড়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় বেশিরভাগ গাড়ির ইঞ্জিনসহ যন্ত্রপাতিও নেই গাড়িতে। সুযোগ বুঝে চোরেরা চুরি করে নিয়ে গেছে। এখন শুধু গাড়ির বডিগুলোই পড়ে আছে। ২২টি গাড়ির মধ্যে বেশ কয়েকটি গাড়ি এখনো সংস্কার করার মতো রয়েছে। আর বাকিগুলো নিলামে বিক্রি হলেও কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা অফিসের লোকজনের কাছ থেকে শুনেছিলাম এসব গাড়ি বিদেশি সংস্থা ইউনিসেফ দিয়েছিল। কিন্তু রংপুরে আনার পর সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি। বহুদিন ধরে অযন্ত অবহেলায় পড়ে থাকতে থাকতে এখন গাড়িগুলো অকেজো অবস্থায় রয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা হয়। পরিচয় প্রকাশে অনীহা জানিয়ে একজন জানালেন, তার চাকরি হয়েছে ১৯৯১ সালে, তিনি রংপুরে পরের বছর যোগদান করেন। ওই সময় থেকে এসব গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখে আসছেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার এসব গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়, বিআরটিএসহ বিভিন্ন অফিস থেকে লোকজন এসে এসব গাড়ি দেখে গেছে। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
আরেক কর্মচারী বলেন, আমি ২০০৭ সাল থেকে এখানে চাকরি করছি। যোগদান করার শুরুতে যেমন দেখেছি, এখনও খোলা আকাশের নিচেই গাড়িগুলো পড়ে রয়েছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় এসব বেওয়ারিশ। অনেক কিছুই খোয়া গেছে। এখন চাইলেও কাঙ্খিত নিলাম মূল্য পাওয়া সম্ভব হবে না।
দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এসব গাড়ি বর্তমানে মাদকসেবীদের আখড়া এবং অর্থের জোগান হয়ে আছে। অকেজো গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি আর বাকিগুলো সংস্কার করে জনগণের সেবার আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ৩০ বছর কিন্তু সময় নয়, এই দীর্ঘ সময়েও এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করা কেন সম্ভব হয়নি সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। একই সঙ্গে ত্রিশ বছরে রাষ্ট্রীয় এসব সম্পত্তি খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে যেভাবে নষ্ট হয়েছে, এজন্য সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রয়োজন রয়েছে। এসব গাড়ি জনগণের সেবার জন্য সরকার দিয়েছিল কিন্তু জনগণের কাজে লাগছে না। কোটি টাকার সম্পদ অকেজো শব্দের ভাগাড়ে পড়ে থেকেই শেষ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গাড়িগুলো এখন আর নিলামে তোলার অবস্থাতেও নেই। সরকারি গাড়ি বিক্রির জন্য নিলামে তোলার প্রক্রিয়াটা বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ।
রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাড়িগুলোর তালিকা আমাদের স্টোর কিপারের কাছে রয়েছে। এগুলো বিআরটিএ কর্তৃক ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আমাদের স্টোর বিষয়ক কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে নিলামযোগ্য গাড়িগুলো সরকারি নিয়মে বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টাকা জমা করবো।
দীর্ঘদিনেও নিলাম প্রক্রিয়া আলোর মুখ না দেখায় গাড়িগুলোর যন্ত্রাংশ খোয়া গেছে, এতে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি যন্ত্রাংশ যাতে চুরি না হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। আমার এসব গাড়ির ব্যাপারে আবারও বিআরটিএ’র কাছে মতামত চাইবো। যেসব গাড়ি সচল করা সম্ভব, প্রয়োজনে সেগুলো আমরা রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা করতে পারি।
বা বু ম / অ জি