সোহেল রানা, ঢাকা :
ঢাকার সাভারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির এক নেতার আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ৩ জন পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ২৯ জন নেতা-কর্মীকে।
বুধবার (৩১ আগস্ট) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সাভারের বাড্ডা ছায়াবিথি এলাকার সাবেক কমিশনার মৃত শামসুল হক মোল্লার ছেলে ঢাকা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাভার পৌরসভার সাবেক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোরশেদ আলমের বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় এই ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন , সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক ও ট্যানারি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাসেল মোল্লা , এস আই আশরাফ ও কনস্টেবল শামীম। তাদের সবাইকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বাকিদের নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় আটকৃতরা হলেন, সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর থানার ইউনুসপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো: এরশাদ (৩০), তিনি সাভার উপজেলার ওয়াবদা মোড় এলাকায় বসবাস করেন, রংপুর জেলার পীরগাছা থানার কাগিচা বাড়ি গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের ছেলে মো: আবুল হোসেন (২৪), তিনি থানা স্ট্যান্ড এলাকার রাজ্জাকের বাড়ির ভাড়াটিয়া, ওয়াবদা মোড় এলাকার রিপন সরকারের ছেলে নিভিড় সরকার (২৫), রাজাশন ঈদগাহ মাঠ এলাকার মোঃ বিল্লাল হোসেনের ছেলে মো: মনির হোসেন (২৭), চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার মৃত আহম্মদ হোসেনের ছেলে মো: রাকিব (৪৫), তিনি ছায়াবীথি আমতলা এলাকায় বসবাস করেন, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার কৈয়াদি গ্রামের শেখ জুলহাস (৪০), তিনি ডগরমোড়া এলাকায় পরিবার সহ ভাড়া বাড়িতে থেকে ফার্নিচারের ব্যবসা করেন, মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার চররাজনগর গ্রামের মৃত আলিম উদ্দিনের ছেলে মোঃ দেলোয়ার হোসেন (৪০), তিনি ছায়াবীথি এলাকায় বসবাস করেন, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার বাসন্তী গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ইউসুফ আলী (৩১), তিনি ছায়াবিথি এলাকার ফারুক হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার বলিয়া পাড়া এলাকার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মো: রিফাত (১৬), একই এলাকার মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে মো: রাজ্জাক (৪৩), ছায়াবীথি এলাকার মৃত বরকত আলীর ছেলে মোঃ বিল্লাল হোসেন (২৫), ঢাকা জেলার ধামরাই থানার নান্না গ্রামের মৃত বজলুল হকের ছেলে মোঃ আব্দুল জব্বার(৫২), বাড্ডা ভাটপারা এলাকার তারা মিয়ার ছেলে মো: রিপন হাসান (৩৭), মো: আরমান হোসেন (২৪), সবুজবাগ এলাকার মো: আব্দুল গফুর মিয়ার ছেলে মোঃ ফরহাদ হোসেন (৪২), বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ থানার মেহেন্দিগঞ্জ গ্রামের মোঃ সালাউদ্দিনের ছেলে মো: শিমুল (১৭) , তিনি জাহাঙ্গীরনগর সোসাইটি এলাকার আবুল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া, বক্তারপুর এলাকার মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে মোঃ ইয়ার রহমান (৪৭), ডগরমোড়া এলাকার হাজী আবু সাঈদের ছেলে মোহাম্মদ নাহিদ (৪০) , জামসিং এলাকার মৃত আজিজুল রশিদের ছেলে মো: বাবু (৫২) , শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার চরবাঘা গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুস সালাম (৩৭) , তিনি ছায়াবীথি এলাকার মশিউর রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া, ছায়াবীথি এলাকার মৃত জবেদ আলীর ছেলে মোঃ মাহাতাব উদ্দিন (৫৪) , মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কনকলার বাজার এলাকার মোঃ শাহজাহান খানের ছেলে মো: আল-আমিন (৪৪), তিনি ছায়াবীথি এলাকার আইসক্রিম ফ্যাক্টরির গলি সেলিমের বাড়ির ভাড়াটিয়া, রাঢ়ি বাড়ি এলাকার আবু সাঈদ মিয়ার ছেলে মো: ইছাহাক আলী (৪০) , জলেশ্বর এলাকার আতাউর রহমানের ছেলে মো: আনিসুর রহমান (৪৮), তোফানির ছেলে মো: আতিকুর রহমান (১৪) , ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার কুরগাঁও পুরাতন পাড়া এলাকার মৃত মো: আবদুল হাকিমের ছেলে মোঃ সাদ্দাম হোসেন (৩০), আশুলিয়া থানার কিত্তিনোয়াদ্দা এলাকার মৃত রমজান আলীর ছেলে মোঃ হযরত আলী (৪৭) , সোবহানবাগ এলাকার মৃত শাহিদ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ রনি (২৭ ), আব্দুল হামিদের ছেলে সালাউদ্দিন পলাশ (৪০)।
২৯ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী মাইনুল ইসলাম, পিপিএম।
পুলিশ সূত্র জানায়, অনুমতি ছাড়াই বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম মাহফিলের আয়োজন করে। তাদের মাহফিলকে কেন্দ্র করে সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। সাভার মডেল থানার টহল পুলিশ সড়ক ক্লিয়ার করতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ করে ককটেল বিস্ফোরণ করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। এ ঘটনায় আমাদের তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় দেশীয় অস্ত্রসহ তিনটি তাজা ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেওয়া মাসুদ রানা বাংলাদেশ বুলেটিন ডটকমকে বলেন, ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার বিএনপি নেতা খোরশেদ আলম সাভারে দীর্ঘদিন ছিলেন না । তিনি এলাকায় এসে তার পৈত্রিক বাসভবনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন । এতে এলাকার সাধারণ মানুষ, বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়। মিলাদের পর এক টিপ খাওয়া শেষে দ্বিতীয় টিপ খাবার খেতে বসতেই ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে লাঠিপেটা শুরু করে। মাহফিলে অংশ নেওয়া যে যার মত পালাতে থাকে, অনেকে বাস ভবনের ভিতরে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায় । আমি কোন মতে পালিয়ে এসেছি । আমি সহ ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছে, প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় যাচ্ছি।
এব্যাপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম পিপিএম বলেন, আমাদের পুলিশকে লক্ষ করে তারা ককটেল নিক্ষেপ করেছেন। এ ঘটনায় আমাদের তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ২৯ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।