বাংলার ভূখন্ড ভুলবেনা যারা প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছে ‘অ’আ’ক’খ’ বর্ণমালা
বুড়ো বসুন্ধরায় নয়া পরিচয় বহন করে বঙ্গের এই একুশ। আমরা ফিরে পাই শক্তি,নতুন উদ্যম,শীর্ষে উঠার প্রেরণা। সালামের গর্জনে সাহসী হই, বরকতের সুরে বাংলা বর্ণমালা সাঁজাই, জব্বারের হাত ধরে রাজপথ কাঁপাই, প্রথম শহীদ রফিকের চোখে স্বপ্ন দেখি, শিশু শ্রমিক অহিউল্লাকে দেখে অধ্যবসায়ী হই। এখন দিন বদলের প্রচেষ্টায় আমরা নেমেছি আরেক মিছিলে। বাংলাকে উন্নত করতে চাই বিশ্ব দরবারে।ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে প্রতিবছর উত্তাপ সৃষ্টি করে একুশ। আমাদের মনে ঢেউ তুলে মনে করিয়ে দেয় “আমরা বাঙালি অনন্য, আমরা রক্ত দিতে জানি”।বাংলার ভূখণ্ড ভুলেনি তাদেরকে যারা প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছে ‘অ’আ’ক’খ’ বর্ণমালা। বাংলা পঞ্জিকাতে ফাল্গুন আগমনে মনে করিয়ে দেয় সেই দৃশ্য, যে দৃশ্যপট একটু আবছা, ঝাপটে পড়া শকুনের রূপ নির্মম। একুশের ভাবনা বড় বিস্ময়কর মনে হয় এই সময়ে কেননা জ্ঞাতকের থাবা থেকে প্রাণের বিনিময়ে রক্ষা করা বাংলা ভাষার ব্যবহার হয়নি এখনো যথাযথ দখলে চলে যাচ্ছে না তো আমার মাতৃভাষা ? পরোক্ষভাবে অসম্মান করি না তো বাংলা ভাষাকে?এই কি আমাদের উন্নতি!!
কাউসার আহমেদব্যবস্থাপনা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
মূল্যবোধের অভাবে বাংলা ভাষা নিজস্বতা হারাচ্ছে
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি ? না,পারিনা। মা, মাতৃভাষা আর মাতৃভূমি -এই তিন সত্ত্বাই আমার পরিচয়। মা আমাকে পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছিলেন, মাতৃভাষা আমায় নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছে,আর মাতৃভুমি আমাকে দিয়েছে একটা স্বাধীন সার্বভৌম আশ্রয়স্থল যেখানে দাড়িয়ে আজ আমি আমার মুক্ত চেতনাকে বিকশিত করি। তাইতো একুশ আমার গর্ব, আমার অহংকার, আমার গৌরবময় সত্তা।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ভাষার অধিকার আদায় করেছিলো বাঙালি তরুণরা। একবিংশ শতাব্দীর এ যুগেও একুশ যেনো তরুণদের শিখায় আত্মমর্যাদাবোধ মাথা নত না করা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও যাবতীয় গোঁড়ামি আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের অঙ্গীকার। ছোটোবেলা থেকেই দেখেছি একুশে ফেব্রুয়ারি এলে গ্রামের স্কুলে নানা আয়োজন। প্রতীকি শহিদ মিনার তৈরী করে তাতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের দৃশ্য আমার মগজে ঢুকায় একুশের চেতনা। আমরা কি আমাদের ভাষাকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারছি? মূল্যবোধের অভাবে বাংলা ভাষা তার নিজস্বতা হারাচ্ছে। ইংরেজি বলাকে আমরা স্মার্টনেস মনে করছি।তরুণ প্রজন্ম যদি আধুনিকতার নামে শেকড়কে অগ্রাহ্য করে,তাহলে রক্ত দিয়ে অর্জিত আমাদের এ বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষা কঠিন হবে। সাবলিল ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরাই পারি আমাদের ভাষাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে নিয়ে যেতে। একুশের চেতনা বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাক নতুন প্রজন্ম।
ফারহানা খানমইংরেজি বিভাগ,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
একুশ মানেই মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার ইতিহাস
একুশ মানেই আমার মায়ের ভাষাকে রক্ষা করার ইতিহাস। একুশ মানেই আমার শিক্ষার্থী ভাই বোনদের হাহাকার গুলোকে লালন করার ইতিহাস। একুশ আমাকে মনে করিয়ে দেয় কিভাবে আজ প্রতিনিয়ত উচ্চারণ করছি প্রতিটি বাংলা শব্দ। একুশ আমাকে মনে করিয়ে দেয় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি এই ভাষা আন্দোলন।
আমার ভাইদের রক্তকে সম্মান করতে তাদের ত্যাগের কথা স্বরণ করে তরুণদের ইতিহাস জানতে হবে। বাংলা ভাষার জন্য, মাতৃভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে সেই বাংলাকে রক্ষার কাজে বাংলাকে বিশ্বের বুকে উপস্থাপন করতে তারুণ্যের এগিয়ে আসতে হবে।
জুলফিকার আলী সামিন ব্যবস্থাপনা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
একুশের মহিমা ছড়িয়ে পড়ুক দিগ-দিগন্তে
বাঙালির ইতিহাসে একুশ কেবল একটি সংখ্যা না তারিখ নয়- একুশ একটি চেতনার বীজ, একটি আবেগঘন স্মৃতি। একুশ রক্তে ভেজা, কান্নায় সিক্ত,গৌরবে মহিমান্বিত।
বাংলা ভুখণ্ড সেই বহুপূর্ব থেকেই শাষণ করেছে বিভিন্ন বিদেশি শক্তি– পাল, সেন, তুর্কি, ইংরেজ, পাকিস্তানি। কোন কোন গোষ্ঠী বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করলেও কোন কোন গোষ্ঠী উপেক্ষা করেছে,মেরে ফেলতে চেয়েছে। ভারতবর্ষ বিভক্তির আগে বাংলা ভুখণ্ডের ভাষা উর্দু না বাংলা এই নিয়ে একটা তর্ক-বিতর্ক উঠেছিলো বটে কিন্তু পাকিস্তানি আমলে সেটা জন্মদিয়েছিলো এক নজিরবিহীন ইতিহাসের।মায়ের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারী রাজপথ রক্তে প্লাবিত হয়েছিলো। সেই রক্তাক্ত প্লাবনে ভেসে বাংলা এসেছিলো রাষ্ট্রভাষা হয়ে। বাঙালি জাতির মধ্যে একুশ যে জাতিসত্ত্বার বীজ বুনেছিলো সেই বীজেরই অঙ্গুরিত ফসল স্বাধীনতা। প্রতিবছর পৃথিবীর কাছে একুশ আসে ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখ হয়ে, বাঙালির কাছে আসে হৃদয়ের দ্বারে চেতনার আদর্শ হয়ে। একুশকে ঘিরে আমাদের উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই– বিপুল সমারোহে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া, নগ্ন পদযাত্রা, মাসব্যাপী বইমেলা।
তবে দুঃখের বিষয় একুশের শোক আজ পরিনত হয়েছে উৎসবে। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন আজও হয় নি, মানা হয় না বানান নীতিমালা, বিদেশি শব্দ মিশিয়ে বাংলা বলার ফ্যাশন ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তবু আমাদের আশা সমস্ত বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে কৃত্রিম সৌধ থেকে বেরিয়ে একুশের মহিমা ছড়িয়ে পড়ুক দিগ-দিগন্তে। ভাষার মাসে একুশের প্রতি নিবেদন “তুমি আজ জাগো”
রাজিয়া খাতুনগণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ভাষা আন্দোলনের বীরত্ব জাতীয়তাবাদকে জাগ্রত করে
একুশে ফেব্রুয়ারি চেতনার উদ্দীপ্ত প্রত্যয়ে গর্জে ওঠা একটি দিন। মাতৃভাষার জন্য মায়ের কোল শূন্য করেছিল সেদিন বাঙালিরা। পৃথিবীর অন্য কোন ভাষা এতোটা আবেগ ছুঁতে পারেনি যেটা বাঙালিরা পেরেছে। যার বীরত্ব ইতিহাসের পাতায় সোনালী অক্ষরে লেখা আছে। আমরা বাংলাদেশ অর্জনের আগে ভাষার স্বাধীনতা অর্জন করছি। বাংলা ভাষার গৌরব ও মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে হলে এই ভাষার অতীত অবশ্যই জানা প্রয়োজন।
মানুষের মুখে এ ভাষা কেমন করে এলো তা এক অপার রহস্য। ধারনা করা হয়, হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা রুপান্তরিত হয়ে এই বঙ্গীয় অংশেই জন্ম লাভ করেছিল এই মধুর কোমল বাংলা ভাষা।
কত মায়ের মুখ থেকে এই ভাষা এসেছে তা বলা অসম্ভব। কত মায়ের বুক থেকে মুখে এ ভাষা এসে অন্তরে, আবেগে জায়গা করে নিয়েছে। তাইতো বিশ্বকবির খেতাব অর্জন করে আছেন একজন বাঙালি।
ভাষার স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালিদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে আমরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করি কিন্তু আমাদের দাবী দাওয়া উপেক্ষা হতে থাকে এবং আঘাত আসে ভাষার উপর। ১৯৪৮-১৯৫২ পর্যন্ত চলে ভাষার জন্য সংগ্রাম। অবশেষে ৫২ ‘র একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদের ত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত গড়ে তুলি। একুশে ফেব্রুয়ারী এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গবেষণায় উঠে এসেছে বাংলা ভাষার মতো শ্রুতিমধুর, রুচিসম্মত এবং মননশীল ভাষা দ্বিতীয়টি পাওয়া যায়নি। একুশের চেতনা এবং ভাষা শহীদের ত্যাগ বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম অধ্যায়। এই জাতীয়তাবাদ কে আমাদের মধ্যে জাগ্রত করে দৃঢ় প্রত্যয়ের পাহাড় গড়ে তুলতে হবে। বিনম্র ও গভীর ভাবে স্মরণ করছি সকল ভাষা শহিদদের যাদের রক্তে রঙ্গিন হয়ে আছে প্রতিটি বাংলা অক্ষর।
মোঃ রিয়াজুল ইসলাম রিয়াদ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়