আনোয়ার সাদত জাহাঙ্গীর,ময়মনসিংহঃ
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে এক জন, হালুয়াঘাটে আরও দুজন আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তিন জনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।নিহত নয়ন উপজেলা বারবাড়িয়া ইউনিয়নের বাড়া ফকিরবাড়ির বাসিন্দা এবং ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী ছিলেন।তাছাড়া হালুয়াঘাট উপজেলার খন্ডকপাড়া গ্রামের গৃহবধূ লাকী আক্তার এবং মকিমপুর নগুয়া গ্রামের মির্জা মনি।যুবলীগকর্মী নয়নের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গফরগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম।তিনি বলেন,’বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নিজ ঘরের আড়ার সঙ্গে দড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে নয়ন। পরিবারের লোকজন ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায়। পরে থানায় খবর দিলে সকালে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তের জন্য বিকেলে মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’স্থানীয়রা জানান, নয়নের সঙ্গে পাশের এক গ্রামের তরুণীর ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে নয়নকে ওই তরুণী তাদের এলাকায় যেতে বলে।তারা জানান,১৪ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে নয়ন সেখানে গেলে স্থানীয় একদল যুবক নয়নের পথরোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ওই তরুণী কাছে নিয়ে জোরপূর্ব ছবি তোলে ও ভিডিও ধারণ করে। পরে তারা কিছু টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়।পরে তারা এই ঘটনা নিয়ে একটি ফেইক আইডি থেকে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়।পোস্টটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে লোকলজ্জার ভয়ে নয়ন গত ৮ দিন ধরে নিজের বাড়িতে থেকে বের হননি।স্থানীয়রা জানান,বিষয়টি নিয়ে নিজ এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন হলে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে নিজের ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন নয়ন।গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অনুকূল সরকার বলেন,‘মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ না থাকায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’এদিকে হালুয়াঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গৃহবধূ লাকী আক্তারের সঙ্গে তার স্বামীর পারিবারিক বিরোধ ছিল।দুজনের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় মাঝেমধ্যেই ঝগড়া হতো৷ বৃহস্পতিবার রাতেও দুইজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এমন অবস্থায় রাগে ও ক্ষোভে রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে লাকী আক্তার ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে।তিনি বলেন,‘পরিবারের লোকজন সকাল ৭টার দিকে ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। পরে আশপাশের লোকজন থানায় খবর দিলে আমরা গিয়ে দুপুর ২টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি।’ওসি বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধে মির্জা মনি নামে আরেকজন নারী বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিজ বাসায় বিষপান করেন। তখন পরিবারের লোকজন তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।’হালুয়াঘাট থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে দুজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মির্জা মনির মৃত্যুর ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এছাড়া লাকীর মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় লাকীর স্বামীকে আসামি করে বাবা আব্দুল হাকিম একটি হত্যা মামলা করেছেন। ঘটনা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।