বাংলা তথা বাঙালির সামাজিক আন্দোলনের ইতিহাসে সুফিয়া কামাল এক ঐতিহাসিক চরিত্র। নারীর স্বাধিকারের আন্দোলনকে সুফিয়া কামাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নারীর জন্য সম্পূর্ণ আকাশের লক্ষ্যে সমস্ত ধরনের সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে লড়াইকে স্থিত করেছিলেন।
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য লড়াই, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই আর ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য লড়াই—প্রতিটি সংগ্রামই যে বৃহত্তর আঙ্গিকে মানবমুক্তির পক্ষে যুদ্ধের এক-একটি ক্ষিপ্র হাতিয়ার, সুফিয়া কামাল তাঁর নিজের জীবন ও কর্মের ভেতর দিয়ে তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।উনিশ শতকের দোলাচাল অতিক্রম করে বিশ শতকের বাঙালি নারীমানসকে ঘরের আগল ভেঙে সমাজবিকাশের প্রত্যক্ষ অংশীদার হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যাঁদের অবদান অবিস্মরণীয়, তাঁদের প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব সুফিয়া কামাল।
উনিশ শতকে ব্রিটিশের শাসন আর শোষণের মিশ্রিত নীতি আধুনিক মননে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। আর সেই প্রতিষ্ঠার ফসল হিসেবে উনিশ শতকের নবজাগরণের ফসল কার্যত একচেটিয়া ভোগ করেছে হিন্দু সম্প্রদায়। সেই জায়গা থেকে বাংলা তথা বাঙালির প্রাণ মুসলমান সম্প্রদায়কে এতটুকু বিচ্ছিন্নতার মানসিকতাসম্পন্ন হতে না দিয়ে আধুনিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং প্রতিবেশী হিন্দুসমাজের যথার্থ হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তুলে ধরতে নবাব ফয়জুন্নেছা, মীর মশাররফ হোসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, বেগম রোকেয়া, নজরুল মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন প্রমুখ যে ঐতিহাসিক অবদান রেখে গেছেন, সেই পথের অগ্রপথিক সুফিয়া কামাল।