স্টাফ রিপোর্টার-
নারীদের মৃত্যুর হারের দিক থেকে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্তন ক্যান্সার। তবে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। এর কারণ বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগ নির্নয় হচ্ছে স্টেজ ফোর বা একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে৷ স্ক্রিনিংয়ের অভাব, জনসচেতনতা সহ নানা কারনে স্তন ক্যান্সারে রোগী মৃত্যুর হার আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটে ‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতা: গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় আগত বক্তারা এ সব কথা বলেন। স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস উপলক্ষে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নূরুন নাহার হেনা। তিনি বলেন, প্রতিবছর ১৫ হাজারের বেশি মানুষ ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। সচেতনতার অভাবেই এমনটা হচ্ছে৷ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে না পারলে দিনের পর দিন এটা বেড়েই যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের মেয়েরা স্তণ শব্দটা বলতেই লজ্জাবোধ করে। যে কারণে কান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরেও তারা বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারে না। যখন করার কিছুই থাকেনা, তখন ডাক্তারের কাছে যায়। এ অবস্থা পরিবর্তনে তৃণমূল পর্যায় থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত কর কমিশনার এবং বিএসসিএফের (ব্লু স্কাই চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা আয়েশা সিদ্দিকা শেলী।
তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতি মিনিটে আট জন নারীর মধ্যে একজন নারী এই রোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এটা সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। স্তন ক্যান্সার মূলত নারীদের রোগ। তবে এক শতাংশ পুরুষও এতে আক্রান্ত হয়। উন্নত দেশগুলোতে চল্লিশ বছর বয়সের পর নারীদের স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। তবে বাংলাদেশ এমন কোনো ব্যবস্থা নেই।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, নারী স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীনতার কারণে স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে৷ চল্লিশ বছর বয়স থেকে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনার পরামর্শ দেন তারা। বক্তারা জানান, আর্থিক অস্বচ্ছলতা স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর একটা বড় কারণ। অপারেশন, রেডিওথেরাপিসহ ক্যান্সারের যেকোনো চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তাই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখার আহবান জানান বক্তারা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এ জেড. মাহমুদুল হাসান বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীরা শারীরিক জটিলতার পাশাপাশি মেন্টাল ট্রমায় আক্রান্ত হয়। এই ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা মূলত ঢাকা কেন্দ্রীক। লম্বা সময় কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি দিতে হয়। সমস্ত কাজ ফেলে ঢাকায় হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয় রোগীকে। রোগীর সঙ্গে তার স্বামী বা কাউকে থাকতে হয়। ফলে সাধারণ নিম্ন আয়ের পরিবারের আয়ের পথও বন্ধ থাকে। এ জন্য দেশের আট বিভাগে সমন্বিতভাবে স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহবান জানান তিনি।
কর্মশালায় জানানো হয়, ২০ বছর থেকেই নারীদের নিজেদের স্তন পরীক্ষা করা উচিত৷ ৩০ বা তার বেশি বয়সের নারীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে নিয়মিত স্তন ক্যান্সার ঝুঁকির বিষয়ে পরামর্শ নিতে হবে। ৪০-৫৪ বছরের নারীদের প্রতি বছর একবার স্তনের আল্ট্রাসনোগ্রাম বা ম্যামোগ্রাম করতে হবে। আর ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের প্রত্যেক দুই বছর পরপর ম্যামোগ্রাম বা আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা গণমাধ্যমে নাটিকা প্রচার এবং দেশের তৃণমূল পর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির আহবান জানান।