কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরীর সাথে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামানের দ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকাশ্য হয়ে উঠছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ট্রেজারারের গাড়ি নিয়ে দুজনের মাঝে এই দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। ট্রেজারার বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে তার জন্য নতুন গাড়ি বরাদ্দ হওয়া উপাচার্যের পছন্দ নয়। তবে ব্যাপারটি অস্বীকার করেছেন উপাচার্য।
সবশেষ রোববার (২০ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে অতিথি হিসেবে দেওয়া বক্তব্যে দুই জন একে-অন্যের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা।
যে অনুষ্ঠানে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে সেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, লোভী মানুষ কোথাও গেলে সে সবকিছু তছনছ করে ফেলে। যখনি তাদের স্বার্থে কোনো আঘাত লাগে তারা হট্টগোল বাঁধিয়ে দেয়। আপনারা সতর্ক থাকবেন, যখন দেখবেন অসৎ মানুষগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদের অপচয় করছে আপনারা তা প্রতিহত করবেন।
অন্যদিকে একই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ন্যায়সঙ্গত কাজ করতে এসেছি। চ্যালেঞ্জে যাবেন? আসেন। আপনার জন্য সবজি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি সপ্তাহে ২-৩ বার ঢাকায় যেতে হয়। অথচ আপনাকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত আপনি আমাকে অপমান করছেন, অপদস্থ করছেন। সহ্য করছি কিছু বলি নাই আপনাকে। আমাকে কর্মচারী ভেবেছেন আপনি? আপনার থেকে কম লেখাপড়া করেছি? আপনার থেকে কম গবেষণা জানি? আপনার সাথে আমি একদিনের জন্য উচ্চবাচ্য করিনি। দিনের পর দিন তিনি আমাকে ইনসাল্ট করেছেন। কেনো? আপনি আজকেও সেই একই কথা বলার চেষ্টা করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বোচ্চ দুই অভিবাবকের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের কথা নিশ্চিত করেছেন সেখানে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কর্মকর্তা।
উপাচার্যের সাথে এমন দ্বন্দ্বের ব্যাপারে জানতে ট্রেজারারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার অফিসে আসবাবপত্র কিনেছি এগুলো নিয়েও উনি আমাকে কথা শুনিয়েছেন। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগে শিক্ষকদের মাঝে কোন্দল থামাতে উনি আমাকে বন্ধের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন। এতো যাতায়াতে গাড়ির তেল খরচ বেশি হয়েছে তাই আমার ড্রাইভারকে ‘চোর’ অপবাদ দিয়েছেন। আমার একটি নিজস্ব গাড়ি থাকার কথা, কিন্তু নেই। ইউজিসি থেকে আমার নামে নতুন গাড়ি কেনো আসবে তাতে উনার সমস্যা হয়। উনার কম পড়ে।
উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি তাকে কিছু বলি নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে নিয়মের মাঝে যে ব্যত্যয় ঘটবে এবং যেখানে অনিয়ম হবে সে ব্যাপারে আমি কথা বলে থাকি। আর গাড়ীর দায়িত্বেই তো সে আছে। আমি তো নিজ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেইনি। তিনি মিথ্যা কথা বললে তো হবে না।
ট্রেজারারের গাড়ী চালককে ‘চোর’ অপবাদ দিয়েছেন এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
ট্রেজারারের গাড়ীর বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, এখন সরকার থেকে গাড়ী কিনার ব্যাপারে রেস্ট্রিকশন আছে। জুনের ৩১ তারিখ পর্যন্ত গাড়ী কিনতে পারবো না। তারপরও উনি উনার প্রোটোকলে যে গাড়ী পাওয়ার কথা তা আমরা দিতে পারতেছি না। তেলে চালাইতে গেলে উনার যে সিলিং আছে তার চেয়ে বেশি খরচ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ দুই নীতিনির্ধারকের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শামিমুল ইসলাম বলেন, একটা ফ্যামিলিতে যখন দুজন সিনিয়র বাবা-মার মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে তখন সেই ফ্যামিলির আগানোর কোনো সুযোগ নেই। স্যারদের মধ্যে খুব সুন্দর সম্পর্ক, তারা একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছেন। তাদের মধ্যে সবসময় সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কই দেখেছি। এখন হুট করে কেন তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলো বুঝতে পারছি না, হয়তো সাময়িক কোনো টানাপোড়ন। আশা করি এটা ঠিক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান উপাচার্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পর নতুন গাড়ি কেনেননি। তিনি বর্তমানে আগের উপাচার্যের কেনা গাড়িটি ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে ট্রেজারারের জন্য যে গাড়িটি বরাদ্দ ছিল সেটি অকেজো হয়ে পড়ায় তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পের জন্য কেনা একটি মালবাহী গাড়িতে চলাচল করেন।