মোঃ সাইফ উদ্দিন রনী, কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান:
সবুজ লতাপাতা গাছের মাঝে ঝুলছে হাজার হাজার হলুদ তরমুজ। খোসা একেবারে হলুদ রঙের, আর পাকলে ভেতরে শাঁস হয় টকটকে লাল। কুমিল্লায় প্রথম হলুদ তরমুজ চাষ করেছেন তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রান্তিক কৃষক আনোয়ার হোসেন। স্মাট ফোনে ইউটিউব থেকে হলুদ তরমুজ চাষের পদ্বতি দেখে আকৃষ্ট হন তিনি।
কুমিল্লায় প্রথম বারের মতো চাষ হলো হলুদ তরমুজ ‘গোল্ডেন ক্রাউন’। সদর দক্ষিণ উপজেলার বলরামপুর গ্রামে তরমুজ চাষী আনোয়ার হোসেন শুরু করেছেন হলুদ তরমুজ চাষ, এই তরমুজ সাধারণত চাষ হয় জাপান-তাইওয়ানসহ পূর্ব এশিয়ান অঞ্চলে। তবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায়ও করা হয়। সাধারণ তরমুজের চেয়ে বেশি মিষ্টি এই হলুদ তরমুজ।
মাঁচায় চাষ করা হলুদ তরমুজের বাম্পার ফলন নিয়ে আশাবাদী চাষী আনোয়ার। এ হলুদ তরমুজ যেন কৃষক আনোয়ারের সোনালি হাসি। প্রতিদিনই এ সোনালী হাসি বড় হচ্ছে আর কয়েকদিন পরই তা বিক্রি শুরু হবে। গত বছর ১২ মাসি কালো তরমুজ চাষ করে আলোচনায় আসেন এই কৃষক। ২০ শতক জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে বিক্রি করেছিলেন ২ লক্ষ টাকার বেশি। এ বছর ২০ শতক জমিতে হলুদ এবং ৪৫ শতক জমিতে আবারো কালো জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। ৬ হাজার ৩শ টাকার বীজ থেকে ৬৫ শতক জমিতে চাষ করেছে ২ জাতের তরমুজ। এ বছর সব মিলিয়ে খরচ হবে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক দূযোর্গ বা শিলা বৃষ্টি না হলে ৯ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আনোয়ার হোসেন জানান, গত বছর কুমিল্লাতে যখন আমি প্রথম কালো তরমুজ চাষ করেছি তখন হাজার হাজার মানুষ আসতো তরমুজ কিনতে, আমি তখন তাদের অনেককেই দিতে পারেনি। তাই এবার ভাবলাম তরমুজের আকারটা একটু বাড়িয়ে চাষ করি। গত বছর করেছিলাম ২০ শতকে, এবার করেছি ৬৫ শতকে, যাতে আমি মানুষের চাহিদাটা মোটামুট মিটাতে পারি। তাছাড়া আমি গতবার কালো তরমুজ করেছি তাই এবার কিছু ভিন্নতা আনার চেষ্ঠা করেছি। এ বছর কালো তরমুজের পাশাপাশি হলুদ তরমুজও চাষ করেছি। চারা রোপনের ৬৫-৭০ দিনের মধ্যে হলুদ তরমুজের ফলন আসবে। এবার হলুদ তরমুজের অনেক ভাল ফলন হয়েছে। কয়েকদিনের দিনের মধ্যেই বিক্রির জন্য উপযোগী হবে তরমুজগুলো। প্রতিটি হলুদ তরমুজ সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ কেজি হবে। বর্তমানে বাজারে এই জাতের তরমুজের প্রতি কেজির দাম একশ টাকা। সে হিসেবে প্রায় দশ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন আনোয়ার।
খবর পেয়ে একই এলাকার কৃষক কামাল,শাহিনসহ অনেকেই হলুদ তরমুজ ক্ষেত দেখতে আসেন। ফলন দেখে তারা জানান, গতবারও আনোয়ার দরমুজ চাষ করে ভালো আয় করেছে। এবারও নতুন জাতের হলুদ তরমুজ চাষ করেছে। আমাদের এলাকার তরুণ চাষীরা অনেকেই এখন এধরনের নতুন জাতের ফসল ফালাতে আগ্রহী হচ্ছে। আশা করি হলুদ তরমুজেরও সফল চাষ সম্ভব হবে।
কুমিল্লা চৌয়ার থেকে হলুদ তরমুজ দেখতে আসা সাফায়েত, নগরীর কান্দিরপাড় থেকে আসা জাকারিয়া শাহরিয়ার বলেন, গত বছর আমরা কৃষক আনোয়ার মিয়ার কাছ কাছ থেকে ১২ মাসী কালো তরমুজ কিনে নিয়েছিলাম। এবার শুনলাম হলুদ তরমুজ চাষ করেছে তাই কৌতহল নিয়ে দেখতে আসলাম। কিন্তু হলুদ তরমুজ বিক্রি করতে আরো ১০/১৫ দিন সময় লাগবে তাই কিনতে পারিনি। পরে এসে নিয়ে যাব।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান আরো জানান, এই তরমুজ মাঁচায় চাষ হয়। আর হলুদ তরমুজ সাধারণত সাধারণ তরমুজের মৌসুম শেষ হবার পর বিক্রির জন্য উপযোগী হবে। যে কারণে চাষী এই ফসলের ভালো দাম পাবে। ইয়োলো ট্র্যাপ- ব্যবহার করে কীট পতঙ্গ দমন করা হলে কুমিল্লাবাসী রাসায়নিকমুক্ত ফল পাবে বলে আশা করছি। তবে এই তরমুজ চাষে খুবই যত্ন নিতে হয়। তাকে সবসময় পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন আমাদের স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। এই জাতটি যেহেতু কুমিল্লায় নতুন আমরা এই ফলনটিকে পর্যবেক্ষনে রাখছি।