এখনও বোমার আঘাতের সেই চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে গিলাবাড়িয়া গ্রামের সেই পরিবারটি। ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া টিনের বেড়া স্মৃতি হয়ে আজও রয়ে গেছে।
১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিঠি দিয়ে লিখেছিলেন, ‘আপনি দেশ প্রেমের সুমহান আদর্শ ও প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ মাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে পাক হানাদার দস্যু বাহিনীর হাতে গুরুতর আহত হয়েছেন। এই দুঃসাহসিক ঝুঁকি নেওয়ার জন্যে আপনাকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনার মতো নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক বীর সন্তানরাই উত্তরকালে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তায় এক অত্যুজ্জ্বল আদর্শ হিসাবে প্রেরণা যোগাবে…’
আরেকটি চিঠিতে একই পরিবারের অপর সদস্যের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য পিতা আত্মোৎসর্গ করেছেন। এমন নিঃস্বার্থ মহান দেশপ্রেমিকের পুত্র হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যি আপনি ধন্য হয়েছেন…’’।
এ দুটি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২ হাজার ও ১ হাজার টাকা পাঠানোর কথা জানানো হয়। মুক্তিসংগ্রামের সেই বীর পরিবারটি পেয়েও ছিলো সেই অর্থ। কিন্তু এর পর আর কেউ তাদের খবর রাখেনি। এখনও হাতে আছে সেই চিঠি দুটো।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর বোমার আঘাতে একসঙ্গে পরিবারের পাঁচটি তাজা প্রাণ হয়ে গিয়েছিলো ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন। তাদের অপরাধ বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও তথ্য দিয়ে সহায়তা করা।
ঘটনাটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গিলাবাড়িয়া গ্রামের। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখ। মোকছেদুর রহমান, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে বসে ছিলেন বাড়ির উঠানে। পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর একটি বিমান তাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়ে।
এতে ঘটনাস্থলেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মোকছেদুর রহমানের দেহ। আহত হয়ে কিছুক্ষণ পর মারা যান স্ত্রী ছকিনা খাতুন, মেয়ে রানু খাতুন, দুই ছেলে তোতা মিয়া ও পাতা মিয়া। আহত হয় ছোট মেয়ে চায়না খাতুন। ভাগ্যক্রমে বাড়ির বাইরে অবস্থান করায় বেঁচে যান আরেক ছেলে মিজানুর রহমান।
কিন্তু স্বাধীনতার এত বছরেও কেউ খোঁজ রাখেনি তাদের। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় চলছে তাদের সংসার।
স্বাধীনতায় ওই পরিবারের অবদান ছিলো স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাদের নাম যোগ করা উচিত; এমন কথা জানিয়ে দায় সারলেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিদ্দিক আহমেদ।
তবে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, ‘শহীদ পরিবারের মর্যাদা পাওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে।’ যাচাই বাছাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাসবাণী দিয়েছেন তিনি।