যশোর শহরের ঘোপ সেন্টাল রোডের এএফসি ফোর্টিস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক ছাড়াই রোগীদের কিডনী ডায়ালাইসিস করা হচ্ছিলো। স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই মালিকপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে কিডনী ডায়ালাইসিস ও বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে মানুষকে বোকা হাজার হাজার টাকা লুফে নিচ্ছিলো। সোমবার যশোর জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ অভিযানে এএফসি ফোর্টিসে ভয়াবহ অনিয়ম ধরা পড়েছে।
অপরদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা মানা মেনে মিডপয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্যাথলজিস্ট ছাড়াই ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করা হচ্ছে। যৌথ অভিযানে প্রমাণও পেয়েছে টিমের সদস্যরা। এই তথ্য নিশ্চিত করে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, এএফটি ফোর্টিসে ৫৫ হাজার টাকা ও মিডপয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় বন্ধ ঘোষনা করা হয় ওই দুটি প্রতিষ্ঠান। এছাড়া চিকিৎসক সেবিকা নিয়োগে অনিয়ম ও মূল্য তালিকা ছাড়া রোগীদের কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করার অভিযোগে যশোর আধুনিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এই নিয়ে গত ১৮ দিনে যশোর জেলায় ১৫ টি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হলো।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, সোমবার যশোর জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ অভিযানের নেতৃত্ব দেন সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান। অভিযানে সময় দেখা যায় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এএফসি ফোর্টিসে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন কার্যক্রম। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো রোগীর ডায়ালাইসিসের জন্য ১ জন সেবিকা ও টেকনিশিয়ান। সেখানে কিডনী বিশেষজ্ঞ কোন চিকিৎসক নেই। এই অপরাধে এএফসি ফোর্টিস কর্তৃপক্ষকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানার পর প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করেন ভ্রাম্যমান আদালত। অপরদিকে, মিডপয়েন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে রীতিমতো প্রতারণা চলছে। প্যাথলজিস্ট ছাড়াই রোগীদের সরবরাহ করা হচ্ছে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট। মিডপয়েন্ট ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ কয়েক বছর আগে। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশ না মেনে প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখা হয়েছিলো। অভিযানের মাধ্যমে মিডপয়েন্ট বন্ধ ঘোষণা করাসহ ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমান আদালত। ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, যশোর আধুনিক হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবিকা নিয়োগে অনিয়ম ধরা পড়েছে। কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবিকা থাকার কথা বললেও নিয়োগপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আবার বিভিন্ন পরীক্ষা করার মূল্য তালিকা চেয়ে বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে। যৌথ অভিযানে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আধুনিক হাসপাতালকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। এসব অনিয়ম সুধরে নেয়ার জন্য মালিক পক্ষকে ৭ দিনের সময় বেধে দেয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, এএফসি ফোর্টিস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক ছাড়াই রোগীর কিডনী ডায়ালাইসিসের বিষয়টি মারাত্মক অপরাধ ও দুঃখজনক। তিনি আরো জানান, যশোরের বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সরকারি নিয়মনীতি না মেনে কোন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে রোগীদের অস্ত্রোপচার, চিকিৎসাসেবা প্রদান ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। গত ১৮ দিনে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের
অভিযানে ১৫ টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো হলো
যশোর জেলরোডে মাতৃসেবা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঘোপ স্ট্রোল রোডের এএফসি ফোর্টিস ডায়াগনস্টিক সেন্টার,
মিডপয়েন্ট ডায়াগন্টিক সেন্টার, শার্শা উপজেলার উপজেলার নাভারন বাজার এলাকার এসি ল্যাব, জোহরা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার,ঝিকরগাছা উপজেলার আবিদ ডায়াবেটিস ক্লিনিক, আনিকা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, একতা মেডিকেল সার্ভিসেস, পার বাজার সার্জিক্যাল ক্লিনিক, বাঁকড়া সার্জিক্যাল ক্লিনিক, স্টার ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক স্টোর, সায়রা সার্জিক্যালের ল্যাব, চৌগাছা উপজেলার কপোতাক্ষী ক্লিনিকের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং বাঘারপাড়া উপজেলার মা ক্লিনিক ও মরিয়াম ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
উল্লেখ্য, যশোরে মোট ২৮৭ টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

এরমধ্যে নতুন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স গ্রহণ ও পুরাতন প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেয়া হয়। এরমধ্যে ২৫১ টি হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেন। পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠাবেন সিভিল সার্জন।