বরিশাল জেলার সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী গজনীর দীঘিকে পর্যটন কর্পোরেশনের আওতায় এনে পর্যটন স্পট ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে বরিশাল পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়ন পরিষদ। তাদের মতে শত শত বছরের পুরোনো এই দীঘি এখন ঐতিহ্যবাহী একটি পুরাকীর্তি। কিন্তু সম্প্রতি কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এই দীঘিটিকে আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
এর মধ্য দিয়ে কেউ এই দীঘির সম্পত্তি আত্মসাৎ করার লক্ষ্যে নিজেদের নামে কাগজপত্র তৈরি করছেন। আবার কেউ মামলা টুকে দিচ্ছেন। তবে কেউ কেউ পুরো দীঘিটি লিজের নামে দখলের চেষ্টা চলছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে প্রায় ৪৭০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক গজনীর দীঘি অবস্থিত।
ইতিহাসখ্যাত ব্যক্তিত্ব মুঘল সম্রাট আকবরের অভিভাবক বৈরম খাঁ ১৫৫০ খৃস্টাব্দে বরিশালের চাঁদপুর ইউনিয়নে ১১ দশমিক ৭০ একর জমির ওপর এ দীঘিটি খনন করেছিলেন। তৎকালীন বিখ্যাত সুফি সাধক গজনী শাহ ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য চাঁদপুরায় বসতি স্থাপন করেন। তিনি এই দীঘির পাড়ে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। যে কারণেই বৈরম খাঁর খনন করা দীঘিটি গজনীর দীঘি নামে পরিচিতি লাভ করে। যদিও স্থানীয়ভাবে প্রচলন রয়েছে,
তৎকালীন সময়ে ভারতবর্ষে সম্রাট আকরের অভিভাবক বৈরম খাঁ বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনে দীঘি খননের কার্যক্রম হাতে নেন। তখন গজনী মল্লিককে এই এলাকায় একটি দীঘি খননের জন্য বললে, তিনি তার নামে দীঘিটি খনন করেন। .এই দীঘিকে ঘিরে এক সময় কিংবদন্তি প্রচলিত ছিল। দীঘিটির তিন দিকেই রয়েছে গাছ, আর উত্তর-পূর্ব কোন রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। স্বাধীনতার পরেও গজনীর মেলা বা থৈল ছিল এ অঞ্চলের সেরা বিনোদন।
সেখানে নিয়মিত ঘোড়া দৌড় হতো। পরবর্তীতে নাসির নামে এক যুবক হত্যার ঘটনায় এই মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। খুবই চমৎকার আর বিশাল এই পুকুরটি পিকনিক স্পট করার কথা উঠেছিল ১৯৮৫ সালে। সেই থেকে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে দীঘির রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পালন করছে প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যানুযায়ী,
প্রতিবছর গজনী মেলা মিলতো এখানে। বাতাস ফকিরের আস্তানায় হাজার হাজার মানুষ আসতো কল্যাণের আশায়। কেউবা দীঘিতে গোসল দিতেন, কেউবা মাছকে দিতেন খাবার। কিন্তু ঐতিহ্যের সেই নিদর্শন এখন বেহাত হওয়ার পথে।
স্থানীয়রা জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুকুরের দক্ষিণ পাড় পুরোটাই দখল করে গড়ে উঠেছে বসতভিটা। পূর্বপারও অনেকটা বেদখল।
অবৈধভাবে মাছ শিকার করার পাশাপাশি রাতের আঁধারে দীঘির পাড়ের গাছ কেটে নেওয়ার মতন অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে এখানে। এর বাইরে রাতের দীঘির পাড়ে জুয়ার আসর, মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এর কারণেই সেখানকার বসবাসকারীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আবার কিছু উশৃঙ্খল যুবকের হাতে ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীরা লাঞ্ছিত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।
যদিও এসব অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দীঘিটি উদ্ধারে কাজ শুরু করছে প্রশাসন। এরইমধ্য বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন বরিশাল সদর এবং সহকারী কমিশনার ভূমির নেতৃত্বে দীঘি উদ্ধার এবং এর উন্নয়নে কাজ করছে। আর তাই এরইমধ্যে গজনীর দীঘি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মুনিবুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান।
পরিদর্শন শেষে বরিশাল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, আমরা এটিকে বেদখলমুক্ত করতে কাজ করছি। দীঘিটি উন্নয়ন এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ে লিজ দেয়ার কথা এ মুহুর্তে ভাবছিনা। তবে দীঘিটির যে অংশটি নিয়ে মামলা চলছে তার বাকী অংশটি জেলা প্রশাসনের দখলে আনার জন্য ও উন্নয়নসহ পর্যটন কেন্দ্র করা যায় কিনা তার জন্য জেলা প্রশাসন বরাবর একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,যাই করি বরিশাল পূর্বাঞ্চলীয় নেতা ও জেলার নেতাদের নিয়ে করা হবে। এদিকে বরিশাল পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ মুনাওয়ারুল ইসলাম অলি বাংলাদেশ বুলেটিন২৪ ডট কমকে বলেন, গজনীর দীঘি হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী একটি পুরাকীর্তি। দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে, সরকারের পক্ষের সঙ্গে মামলা দিয়ে, জবর দখল করাসহ নানাভাবে এই দীঘিটিকে আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
ইতোমধ্যে দীঘির পাড় বেদখল হয়ে গেছে। এখন সমগ্র দীঘিকে দখলের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমার এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সরকারি সম্পত্তি তথা জনগণের সম্পত্তি রক্ষা, উন্নয়ন ও পর্যটন স্পট ঘোষণার দাবি জানাই। এ দীঘিকে রক্ষা ও উন্নয়ন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি আরো বলেন, বরিশাল পূর্বাঞ্চলীয় জনগন সব সময় সব কিছু থেকে বঞ্চিত। উপজেলার সকর কাজ করতে সবাইকে নদী পাড় হতে হয়।
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে উপজেলার সকল সুবিধা পূর্বাঞ্চলীয় বাসী নিজ উপজেলায় বসেই পাওয়ারে কথা। বরিশাল পূর্বাঞ্চলে কোন পর্যটন স্পট নেই। তাই আমরা গজনী দিঘীটিকে পর্যটন স্পট করতে প্রয়োজনে আন্দোলনে যাব।