অ্যালোভেরা শরীর ঠান্ডা রাখার জন্যই সাধারণত পরিচিত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত, বসন্ত – সব ঋতুতেই এলোভেরা ব্যবহার করা যায়. এলোভেরার পাতায় ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩, বি৬, বি১২, সি, ই এবং ফলিক এসিডের মতো পরিপোষক পাওয়া যায়। স্বাস্থসম্মত দিক থেকেও এলোভেরার (Aloe Vera) পাতা একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী ভেষজ. এলোভেরা জেল স্বাভাবিক ভাবেই এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, তাই ছোটোখাটো ব্যাথা, পুড়ে যাওয়া কিংবা কেটে যাওয়া জায়গায় ফার্স্টএইড এর কাজ খুব ভালোভাবে করে.
সারা পৃথিবীতে এলোভেরার ৪০০ রকমের প্রজাতি পাওয়া গেলেও মাত্র ৫ টি প্রজাতিই আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য উপকারী। এলোভেরা একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করা হয়।এলোভেরা (ঘৃতকুমারী) তে অনেক রকমের ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে যা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কার্যকরী. যেমন:
১। মধুমেহ রোগী অর্থাৎ ডায়াবেটিকদের জন্য এলোভেরা খুবই উপকারী।
২। হজম সংক্রান্ত কোনো সমস্যার জন্য এলোভেরা অব্যর্থ ওষুদের মতো কাজ করে।
৩। হারের ব্যাথা থাকলে এলোভেরা (ঘৃতকুমারী) ব্যবহার করতে পারেন, আরাম পাবেন।
৪। এলোভেরা রক্তাল্পতা অর্থাৎ এনিমিয়া দূর করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৫। নিয়মিত এলোভেরা জুস (Aloe Vera Juice Benefits) খেলে শরীরের শক্তি বজায় থাকে।
৬। নিয়মিত এলোভেরা জুস খেলে অতিরিক্ত ওজন কমে।
৭। নিয়মিত এলোভেরা জুস খেলে জন্ডিস প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৮। সকালে উঠে এলোভেরা জুস খেলে পেট পরিষ্কার হয় আর খিদেও পায়।
৯। সকালে খালি পেতে এলোভেরা জুস খেলে ব্যাথার উপশম হয়।
১০। বাচ্চাদের সর্দি কাশি হলে ৫ গ্রাম ফ্রেশ এলোভেরা জুসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো।
১১।এলার্জি দূর করতে এলোভেরার জুড়ি নেই।
গরমকালে অনেক সময় এসি থেকে রোদে বা রোদ থেকে এসিতে যাওয়া আসা করলে ত্বকে চুলকানি বা জ্বলুনি হয়. ওই জায়গায় কিছুক্ষন এলোভেরা জেল লাগিয়ে রেখে পড়ে তা ধুয়ে ফেলুন. সাথে সাথে আরাম পাবেন. এছাড়া এলোভেরা জেল স্বাভাবিক ভাবেই এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, তাই ছোটোখাটো ব্যাথা, পুড়ে যাওয়া কিংবা কেটে যাওয়া জায়গায় এবং পোকা কামড়ালে ফার্স্টএইড এর কাজ খুব ভালোভাবে করে.
১২।এলোভেরা কে ঘৃতকুমারী ও বলা হয়. চুলের যত্নে এলোভেরার কার্যকরী উপাদানগুলি চুল ঘন এবং সুন্দর করে তোলে এবং চুলের ‘পি-এইচ’-এর ভারসাম্য রক্ষা করতেও সাহায্য করে. এলোভেরা চুলপড়া কমায়, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, খুশকি দূর করে, স্ক্যাল্পের সমস্যা দূর করে এবং চুলের কন্ডিশনিংও করে. এলোভেরা জেল সরাসরি স্ক্যাল্পে অথবা চুলে লাগিয়ে কিছুক্ষন ভালো করে ম্যাসাজ করে মাথা ধুয়ে নিন. এলোভেরার দুটো পাতা থেকে জেল (Aloe Vera Upokarita) বার করে নিন, এবার অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন, এরপর অল্প ভেজা চুলে লাগিয়ে নিয়ে ১৫-২০ মিনিট উষ্ণ তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে রাখুন. এবার উষ্ণ জল দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন. সপ্তাহে একবার এলোভেরার ব্যবহার করলে দেখবেন চুল ঘন, নরম আর সুন্দর হবে
১৩।দাগ-ছোপ আর ব্রণ দূর করে
মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য এলোভেরা সাহায্যকারী. এলোভেরাতে এন্টি-ফাঙ্গাল, এন্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুন আছে যেগুলি দাগ-ছোপ আর ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে. এতে পোলিসেকেরাইডসও আছে যা ডেডসেল দূর করে নতুন কোষ তৈরিতে সাহায্য করে।এর ফলে ব্রণর সমস্যা দূর হয় আর দাগও থাকে না। রোজ রাতে শোবার আগে ব্রোনোর ওপরে এলোভেরা জেল লাগিয়ে ঘুমোন, আপনি চাইলে এলোভেরা জেলের সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রসও মিশিয়ে লাগাতে পারেন. কিছুদিনের মধ্যেই তফাৎ চোখে পড়বে.
১৪। সানবার্নের অব্যর্থ চিকিৎসা
সূর্যের রশ্মি, বিশেষত ‘ইউ-ভি রে’ আমাদের ত্বকের অত্যন্ত ক্ষতি করে. এলোভেরা জুস্ সূর্যের এই ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আমাদের ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং এর এন্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে. তাই, যখনি আপনি রোদে কোথাও যাবেন, ভালো করে এলোভেরা জুস্ মেখে বেরোন.
১৫। আঁচিল দূর করে
ছোট তুলোর বল বানিয়ে তা কিছুক্ষন এলোভেরা জেলে ডুবিয়ে রাখুন যাতে ভালো ভাবে তুলো এলোভেরা (Aloe Vera) গেল শুষে নেয়. এরপর ওই তুলোর বল কোনো টেপের সাহায্যে আঁচিলের ওপর লাগিয়ে নিন. নিয়মিতভাবে এটা কয়েক সপ্তাহ করলে আঁচিল আপনিই পড়ে যাবে.
১৬। স্ট্রেচমার্কস আর লোমকূপের সমস্যার সমাধান
নিয়মিত এলোভেরা জেলের ব্যবহারে স্ট্রেচমার্কস অনেকটাই হালকা হয়ে আসে. এছাড়া এলোভেরা (Aloe Vera Juice Benefits) এস্ট্রিজেন্টের কাজ করে যার ফলে লোমকূপ টাইট করতেও সাহায্য করে.
১৭। স্ক্রাব হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন
এলোভেরা জেলে একটু চিনি আর লেবুর রস মিশিয়ে স্ক্র্যাব তৈরী করুন. এই স্ক্র্যাব ব্যবহারে ডেডসেল দূর হয় আর তার সাথে সাথে ত্বকের জলীয় উপাদানও বজায় থাকে, ফলে আপনি পান নরম, কমনীয় আর পরিষ্কার ত্বক.
১৮।বয়সের বাড়ার সঙ্গে আমাদের চামড়ায় ভাজ পড়ে যা আপনি সহজেই রুখতে পারেন এই এলোভেরা ব্যবহার করে কারণ এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ৷ এই জেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং এর ভিটামিন এ, বি, সি ও এ উপাদান ত্বকের পুষ্টি যোগায়৷