অদৃশ্য ভাইরাস কোভিড-১৯ বা করোনার থাবায় ক্ষত-বিক্ষত এখন মানবজাতি। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে এর আঁচড় লাগেনি। বাদ যায়নি খেলার মাঠও! করোনা ক্ষমা করেনি ধনী-গরিব, উন্নত-অনুন্নত কাউকে। তালিকায় আছেন বিশ্ব তারকারাও। আক্রান্ত কোটি ছাড়িয়েছে বেশ ক’দিন আগে। প্রান গেছে লাখো মানুষের। তবু থেমে নেই জীবন-জীবিকা। ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ধীরে ধীরে শুরু হচ্ছে সব কর্মযঞ্জ। এরই ধারাবাহিকতায় মাঠে ফিরেছে ফুটবল-ক্রিকেট-টেনিস। চলছে দর্শকহীন ইংলিশ ফুটবল, ইতালিয়ান ও স্প্যানিশ লিগ। ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচ। তৈরী হচ্ছে- পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা। তবে এখনো মাঠে নামতে পারেননি আমাদের খেলোয়াড়রা!
আমাদের করোনা পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যু দু’টোই বাড়ছে! তাই অনেক কিছু খুলে দেয়া হলেও মাঠে ফিরতে পারেননি ক্রিকেটার বা ফুটবলাররা। এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় কর্মকর্তারা! তবে আর বেশিদিন হয়তো ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। অক্টোবরে বাংলাদেশ ফুটবল দলকে আবারো বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে মাঠে নামতে হবে। তাই দেরিতে হলেও জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু করতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন- বাফুফে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ধাপে ধাপে ফুটবলারদের ক্যাম্পে ডাকা হতে পার। এমন সিদ্ধান্তের পেছনে কাজ করছে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়ানো। নিরাপত্তার কথা ভেবেই সবাইকে একসাথে না ডেকে ৬/৭ জন করে ধারাবাহিকভাবে অনুশীলনে ডাকা হবে হয়তো। সবারই কোভিড-১৯ টেস্ট হবে। প্রয়োজনে আইসোলেশন। শুরুতে দেশী কোচের অধীনে অনুশীলন চলবে সপ্তাহ খানেক। এরমধ্যে বিদেশি কোচিং স্টাফদের চলে আসার কথা। এর সবই করা হবে মেডিকেল কমিটির পরামর্শে। আর এ মাসের মধ্যেই একটা গাইড লাইন দেয়ার কথা রয়েছে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন- এএফসি’র। করোনা পরিস্থিতিতে ইউরোপের লিগ গুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেই তা তৈরী করা হবে। এর সবই করা হচ্ছে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে খেলোয়াড়-কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে।
আবাসিক ক্যাম্পের জন্য বাফুফে’র বিবেচনায় আছে নিজস্ব ডরমিটরি, ঢাকার দুটি হোটেল, বিকেএসপি ও সিলেট। খরচ থেকে শুরু করে সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফুটবলারদের রাখা হবে। তবে এ দফায় ফেডারেশনকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ, ৮ অক্টোবর সিলেটে আফগানিস্তান, ১২ নভেম্বর ঢাকায় ভারত ও ১৭ তারিখ ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ আয়োজন করতে হবে। শুধু ম্যাচ আয়োজন করলেই চলবেনা, দিতে হবে সবার স্বাস্থ্যসহ সার্বিক নিরাপত্তা। ততোদিনে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে কাজটা বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে সন্দেহ নেই! তাছাড়া ঘরোয়া ফুটবলের নতুন মৌসুম শুরুর চ্যালেঞ্জ তো আছেই।
দলের জন্যও একট বড়ো চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। এরইমধ্যে বাছাই পর্বের চারটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে লাল-সবুজরা। যার মাত্র একটি থেকে পয়েন্ট পেয়েছে ভারতের সাথে ১-১ গোলে ড্র করে। ১-০তে আফগানদের কাছে পরাজয়টা একই সাথে লজ্জা ও হতাশার! পরবর্তী বিশ্বকাপের স্বাগতিক কাতারের সাথে ২-০ আর ওমানের কাছে ৪-১এ হার। এরা নাহয় র্যাংকিংয়ে বেশ ওপরে থাকা দল। কিন্তু আফগানিস্তানের সাথে হারের ক্ষতটা কি ফরতি ম্যাচে শুকাতে পারবে বাংলাদেশ? নিঃসন্দেহে কাজটা সহজ হবেনা। আলোচনা-সমালোচনা তো আছেই। নিজেদের যোগ্যতা-সামর্থ যেমনই হোক, মাঠে খেলা নেই ৫/৬ মাস। অনুশীলনের সুযোগও ছিলোনা! তাই প্রথম ধাক্কাটা খেতে হবে ফিটনেস নিয়ে। মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠাও ফুটবলারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সর্বোপরি সবাই কতটা সুস্থ থাকেন তাও দেখার বিষয়। এসব দিক বিবেচনায় দু’মাসের অনুশীলনে ফুটবলাররা কতটা ছন্দে ফিরতে পারেন তার ওপরই নির্ভর করছে সবকিছু।