ডেস্ক রিপোর্ট-
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)- এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘কোনো রকম ছলচাতুরি করার প্রয়োজন নাই, জাতিকে সুস্পষ্ট করে জানান, কবে নির্বাচন দিতে চান।’
আজ মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেসবাহ উদ্দিন আহম্মেদের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি কিন্তু একটু ঘোলাটে, আমার ধারণা, এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আজকের এই সরকার জাতিকে আশার আলো দেখাবে।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু করবেন না, যাতে জাতি আপনাদের প্রতি বিশ্বাস হারায়। সরকার সংস্কারের কথা বললেও, এর কোনো লাইন দেখতেছি না। নির্বাচন নিয়ে কোন কথা বললে কেউ কেউ বলেন- ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। আমরা যদি বলি আপনারা নির্বাচনের কথা না বলে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাগল হয়ে গেছেন।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমাদের নেতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, জাতিকে বিভক্ত রেখে কোন উন্নয়ন হয় না। আমরাও বলছি, জাতিকে বিভক্ত করে দেশে উন্নয়ন সম্ভব না।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন মাস হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আমাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়নি। অথচ আপনারা একটা অর্ডিন্যান্স জারি করে ২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। কিন্তু সেটা করছেন না।’
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘বর্তমান সরকার কী চায়-এটা একটি বিরাট প্রশ্ন। তারা নির্বাচন দেবে-এটা বুঝতে পারি না, তারা বেশি দিন থাকবে-সেটাও বুঝতে পারি না। তারা যথা সময়ে দায়িত্ব পালন করে চলে যাবে, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না। অর্থাৎ এই যে বুঝতে পারছি না- আমরা যদি দাঁড়িয়ে চিৎকার করি, তাহলে কী জনগণের মাঝে সংশয় দেখা দেবে যে আমরা এত তাড়াহুড়ো করছি কেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের এত ব্যস্ততা কেন, জনগণের মনোস্তাত্তিক বিষয়গুলো আমদের অনুভব করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ১৬ বছর অপেক্ষা করেছি। আইন উপদেষ্টা বলেছেন, ১৬ বছর অপেক্ষা করেছেন, চারটা মাস অপেক্ষা করতে পারলেন না; আমি আইন উপদেষ্টাকে বলব, চারটা মাস নয়, আরও কয়েক মাস বাড়িয়ে বলুন- কোন সময়ে আপনারা নির্বাচনটা দেবেন? আপনারা আমাদের সহযোগীতা চান কিনা সেটা নিয়েও সংশয় আছে। সে কারণে আমরা না পারছি বিরোধীতা করতে, না পারছি সহযোগীতা করতে। কেমন জানি রাজনৈতিক অবস্থানে আছি। না আমরা আছি বিরোধী দলে, না সরকারি দলে। তবে আমি এতটুকু বলতে পারি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি রাজনৈতিক দল। এটা বিরোধী দল না, সেখানে কেন সরকারের বিরোধিতা করব। তবে মাঝে মাঝে আমরা জনগণের মনের কথা বলে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে শেখ হাসিনা আমাদের সামনে ছিল, আমাদের প্রতিবাদের ভাষাটা তীব্র ছিল। কিন্তু এখন প্রত্যেকটা কথা আমাদের বুঝে শুনে বলতে হয়। কারণ, আমরা দেশে একটি স্থায়ী সমাধান চাই, আমরা একটি জনগণ দ্বারা ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার চাই।’
ছাত্র-জনতার রক্তের ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উল্লেখ করে গয়েশ্বরচন্দ্র বলেন, ‘এই সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা, তারা নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এই সরকার যদি দেশে একমাত্র অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ গঠনের দায়িত্ব পালন করতে পারে, তাহলে আপনারা ইতিহাসের পাতায় সমালোচনাবিহীন একটি আদর্শের জায়গায় আপনাদের নাম লেখা থাকবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে দেশটা ধ্বংসের দিকে যেতে পারে। তাই এই সরকারকে ব্যর্থ হওয়া যাবে না।’
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের কালাম ফয়েজির সভাপতিত্বে ও জহিরুল ইসলামের কলিমের পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপি নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমত উল্লাহসহ সংগঠনের হোসনে আরা প্রমুখ।