ক্যারিয়ারে ৭০০তম গোলের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন লিওনেল মেসি, কিন্তু এই গোলের মাধ্যমে তিনি বার্সেলোনাকে তিন পয়েন্ট উপহার দিতে পারেননি। মঙ্গলবার লা লিগার গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এ্যাথলেটিকোর মাদ্রিদের সাথে ২-২ গোলে ড্র করে আবারো পয়েন্ট হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
ক্যাম্প ন্যুতে ম্যাচের ৫০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ক্যারিয়ারের আরো একটি মাইলফলক স্পর্শ করেন মেসি। কিন্তু সাওল নিগুয়েজের দুটি পেনাল্টিতে দুইবার পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারী এ্যাথলেটিকো। এর আগে দিয়েগো কস্তার আত্মঘাতি গোলে ১১ মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা। এই ড্রয়ে শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের থেকে এক পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানেই থাকলো বার্সেলোনা। সেভিয়ার থেকে দুই পয়েন্ট এগিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকলো এ্যাথলেটিকো। মঙ্গলবার অপর ম্যাচে লেগানেসকে ৩-০ গোলে পরাজিত করেছে সেভিয়া।
হেড-টু-হেডে এগিয়ে থেকে রিয়াল মাদ্রিদ কিছুটা হলেও বার্সেলোনার থেকে এগিয়ে রয়েছে। আর পরপর দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে কাতালান জায়ান্টদের জন্য। গত চার ম্যাচে এটি তাদের তৃতীয় ড্র। খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের মধ্যে কিছুদিন ধরে চলতে থাকা চাপা উত্তেজনায় কোচ কিকে সেতিয়েনের ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
যদিও ম্যাচ শেষে সেতিয়েন বলেছেন, ‘ড্রেসিং রুম থেকে আমি অবশ্যই সমর্থন পাচ্ছি। বোর্ডের সাথে সভায় কি হয়েছে সেটা এখন আমি বলতে চাচ্ছিনা।’
শনিবার সেল্টা ভিগোর সাথে ড্র করার পর ড্রেসিং রুমে খেলোয়াড়দের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সেতিয়েন। ঐ একই ম্যাচে পানি বিরতির সময় মেসির সাথে সেতিয়েনের সহকারী এডার সারাবিয়ার একটু ঝামেলা হয়েছিল।
কালকের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে আরো একবার ১২০ মিলিয়ন ইউরোর ফরাসী তারকা আঁতোয়ান গ্রিজম্যানকে বদলী বেঞ্চে বসিয়ে তার পরিবর্তে ২০ বছর বয়সী রিকুই পুইগকে মূল একাদশে নামিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন সেতিয়েন। এই ধরনের সিদ্ধান্তে স্বাভাবিক ভাবেই কোচের সাথে খেলোয়াড়দের দূরত্বের বিষয়টি সামনে চলে আসে। গ্রীজম্যান সম্পর্কে সেতিয়েন পরবর্তীতে বলেছেন, ‘তার মানের একজন খেলোয়াড়ের জন্য এই ধরনের বদলী বেঞ্চে বসে থাকাটা কঠিন। কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে সেটা করতে বাধ্য করেছে। আগামীকাল আমি তার সাথে কথা বলবো, তবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নয়, আমার সিদ্ধান্ত যাতে সে বুঝতে পারে সেই চেষ্টা করবো।’
ক্যাম্প ন্যুতে কাল ১১ মিনিটে এ্যাথলেটিকোর জন্য দু:স্বপ্ন উপহার দেন কস্তা। মেসির কর্ণার থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে পোস্টের খুব কাছে থেকে তার কারনেই আত্মঘাতি গোলের লজ্জায় ডুবে দিয়েগো সিমিয়োনের দল। এরপর ১৯ মিনিটে জেরার্ড পিকের বিপক্ষে ইয়ানিক কারাসকোর আদায় করা পেনাল্টি থেকে দলকে সমতায় ফেরাতে ব্যর্থ হন কস্তা। কস্তার শটটি মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগান আটকে দেন। কিন্তু ভিএআর প্রযুক্তিতে প্রমানিত হয় টার স্টেগান শটের আগে তার লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। ফলে দ্বিতীয়বারের মত এ্যাথলেটিকোকে পেনাল্টি উপহার দেয়া হয়। আর এবার আর কোন ভুল করেননি স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সাওল।
মেসির কার্লিং শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। তার ডিফ্লেকটেড ফ্রি-কিক এ্যাথলেটিকো গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক কোনমতে রক্ষা করেন।
অবশেষে বিরতির পরপরই মেসির সামনে সুযোগ আসে মাইলফলক স্পর্শ করার। ফিলিপের বিপক্ষে নেলসন সেমেডোর আদায় করা পেনাল্টি থেকে ৫০ মিনিটে গোল করে মেসি পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারে ৭০০ গোলের রেকর্ড পূর্ণ করেন। কিন্তু যতবারই বার্সেলোনা এগিয়ে গেছে এ্যাথলেটিকো তা পূরনে যেন বদ্ধপরিকর হয়েই মাঠে নেমেছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। আবারো দ্রুতগতির কারাসকোকে আটকাতে গিয়ে ডি বক্সের ভিতর ফাউল করে বসেন সেমেডো। দায়িত্ব নিয়ে ৬২ মিনিটে পুনরায় স্পট কিক থেকে টার স্টেগানকে পরাস্ত করেন সাওল। আরতুরো ভিডাল দুইবার খুব কাছে থেকে বার্সেলোনাকে গোল উপহার দিতে পারেননি। জর্দি আলবার ক্রস থেকে তার দ্বিতীয় প্রচেষ্টাটি অল্পের জন্য রক্ষা পায়। ইনজুরি টাইমে থমাস লেমারের ব্যর্থতায় এগিয়ে যাওয়া হয়নি এ্যাথলেটিকোর।
দিনের শুরুতে অলিভার টরেসের দুই গোলের সাথে মুনিল এল হাদাদির গোলে ৩-০ ব্যবধানে লেগানেসকে পরাজিত করে মাঠ ছেড়েছে সেভিয়া। এই জয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করার পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল সেভিয়া। গেতাফের থেকে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে বর্তমানে চতুর্থ স্থানে রয়েছে সেভিয়া।