ডেস্ক নিউজঃ
পশ্চিম রেলের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (পাকশি) মো. নূরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি রাজশাহী, জয়পুরহাট ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্টেশনে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য তার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল রেলওয়ের প্রকৌশলসহ বিভিন্ন বিভাগ থেকে। কিন্তু তা আমলে নেননি তিনি। রেলের জমি লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রেও তার বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ।
জানা গেছে, নূরুজ্জামান ও তার অধীন দখলদারদের কাছ থেকে আর্থিক ‘সুবিধা’ নিয়ে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। এর ফলে রেলের অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ কাজ এবং ওয়ালসহ বেশকিছু নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। তার কারণে পাকশি রেল বিভাগীয় এলাকার রেলের জমি প্রতিনিয়ত বেহাত হয়ে পড়ছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করার কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, সম্প্রতি পশ্চিম রেলের প্রকৌশল বিভাগ থেকে জিএম বরাবর দেওয়া এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজশাহী প্রধান রেলস্টেশন থেকে কোর্ট স্টেশনের মধ্যবর্তী ২৬৫/৫ থেকে ২৬৭/৩ পিলার পর্যন্ত রেললাইনের সন্নিকটে রেলের জমিতে থাকা অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল, দোকানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এরপর তিনি যথারীতি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু তিনি অবৈধ স্থাপনা ও লাইন ঘেঁষে থাকা অবৈধ বাউন্ডারি ওয়াল উচ্ছেদের কোনো পদক্ষেপ নেননি। প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে আর জানা গেছে, রেলওয়ের সম্পদ ও সম্পত্তির নিরাপত্তার জন্য ২৮ ডিসেম্বর লাইনসংলগ্ন এলাকায় ১ হাজার ৬৩১ ফুট নিজস্ব বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের টেন্ডার করা হয়। কিন্তু রাজশাহী রেল স্টেশন থেকে কোর্ট স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় অবৈধ স্থাপনা থাকায় নিয়োগকৃত ঠিকাদারি এখনো কাজ শুরু করতে পারেননি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হলে সেখানে রেলের কোনো অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করা সম্ভব নয় বলে প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে।
এছাড়া জয়পুরহাট এলসি গেট নং-টি/৮২-তে গেট লজ নির্মাণের জায়গায় অবৈধভাবে দোকানপাট গড়ে তুলেছে অবৈধ দখলদাররা। সম্প্রতি গেট লজ নির্মাণ করতে গেলে অবৈধ দোকানপাটের মালিকরা বাধা দেয়। ফলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হয় প্রকৌশল বিভাগকে। কুষ্টিয়া রেল স্টেশন এলাকার বাংলোর সামনের জায়গা প্রকৌশল বিভাগের অনুমতি ছাড়াই ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা লিজ দিয়েছেন। অবৈধভাবে রেলের জমি ইজারা দিয়ে মো. নুরুজ্জামান ও তার অধীনরা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন। এতে রেলের সম্পত্তি বেহাত হচ্ছে।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, পশ্চিম রেলের বিভিন্ন স্টেশনের ভেতরের দোকানপাট বা কোনো ইয়ার্ড লিজ দিতে হলে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার (ডিসিও) অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা নিজেই বিভিন্ন স্টেশনের ভেতরের ইয়ার্ড, স্টেশনের প্ল্যাটফরমের কোথাও বা খোলা জায়গা লিজ দিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা (পাকশি) মো. নুরুজ্জামান বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তার দাবি, তিনি নিয়ম মেনেই রেলের সম্পত্তি লিজ দিয়েছেন। কারও কাছ থেকে কোনো অনৈতিক সুবিধাও তিনি নেননি।
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার বিষয়ে এ ধরনের মৌখিক অভিযোগ এসেছে। লিখিত অভিযোগ এখনো সদর দপ্তরে আসেনি। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।