1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৫ অপরাহ্ন

ঈদ’কে ঘিরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে চক্রটি!

  • সময় : শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪
  • ৭৬

স্টাফ রিপোর্টার-

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর’কে কেন্দ্র করে রেলওয়ের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছিল একটি চক্র। রেলওয়ের চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সহজ ডট কমের অফিস সহকারীসহ ৯ জনকে গ্রেফতাররে পর এমন তথ্য জানিয়েছে র‌্যাব।

চক্রটি গড়ে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবৈধভাবে বিক্রি করে আসছিল । চক্রের সদস্যদের মোবাইল ব্যাংকিং এ প্রায় কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য প্রমান পেয়েছে র‌্যাবের গোয়েন্দারা।

গতকাল (২১ মার্চ) রাতে সহজ ডটকমের অফিস সহকারী সহ ৯ জনকে আটক করে র‌্যাব। আজ শুক্রবার সকালে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

আটককৃতরা হলো- সিন্ডিকেটের মূলহোতা মোঃ মিজান ঢালী (৪৮) তার প্রধান সহযোগী মোঃ সোহেল ঢালী (৩০), মোঃ সুমন (৩৯), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪৯), মোঃ শাহজালাল হোসেন (৪২), মোঃ রাসেল (২৪), পিতা-মৃত আইয়ুব আলী, দক্ষিণ আই। মোঃ জয়নাল আবেদীন (৪৬), মোঃ সবুর হাওলাদার (৪০) এবং নিউটন বিশ্বাস (৪০)।

এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রেনের বিপুল পরিমাণ টিকেট, ৮ টি মোবাইল ফোন, ১ টি এনআইডি, ১ টি ড্রাইভিং লাইসেন্স, কালোবাজির বিভিন্ন আলামত এবং টিকেট বিক্রয়ের নগদ ১১,৪২২/- টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত মিজান ঢালী দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট বুকিং এর জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যুক্ত ছিল। ২০০৩ সালে সে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান ডেফোডিল এর কমলাপুর রেলস্টেশন শাখায় পিয়ন হিসেবে যোগ দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট বুকিং এ সিএনএস বিডি এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে, অভিজ্ঞ কর্মী হিসেবে তাকে চাকুরিতে পুনঃবহাল রাখা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে রেলওয়ে টিকেট এর চুক্তি সহজ ডট কম কে দেয়া হলে সেখানেও গ্রেফতারকৃত মিজানের চাকুরি বহাল থাকে। দীর্ঘদিন টিকেট এর দায়িত্বপ্রাপ্ত চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে যুক্ত থাকায় সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ.কম এর অফিসে এবং বড় বড় রেলওয়ে স্টেশনের কর্মচারীদের সাথে তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই সে বিভিন্ন স্টেশনে থাকা সহজ.কম এর সদস্য, টিকেট কাউন্টার ও অন্যান্য কালোবাজির চক্রের সদস্যদের সমন্বয়ে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টিকেট বিক্রি করতো। সহজ ডট কম এর কমলাপুর রেলস্টেশন সার্ভার রুমের সার্ভার অপারেটর গ্রেফতারকৃত নিউটন বিশ্বাস, স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিভ গ্রেফতারকৃত সবুর হাওলাদারসহ এবং পলাতক আব্দুল মোত্তালিব, আশিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন উক্ত টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িত।

তিনি বলেন, ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেফতারকৃত মিজান ও সোহেল বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিক সংখ্যক টিকেট সংগ্রহ করতো। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মিজান ও সোহেল প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের সহজ ডট কম এর কর্মচারী ও টিকেট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকেট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করতো। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরে পূর্বের চাইতেও অধিক সংখ্যক টিকেট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিল।

তিনি আরও বলেন, টিকেট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে ৫০ ভাগ সহজ ডট কম ও রেলওয়ে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারম্যানরা পেতো এবং বাকি ৫০ ভাগ সিন্ডিকেটের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মিজান, সোহেলসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এই অর্থ কখনো তারা নগদ হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিতো আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লেনদেন করতো বলে জানা যায়। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকেট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতো। এভাবেই পরষ্পরের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ দেশব্যাপী ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিল।

র‌্যাবের এই পরিচালক জানান, গ্রেফতারকৃত সোহেলকে গ্রেফতারকৃত মিজান তার আত্মীয় হিসেবে সুপারিশ করে প্রথমে সিএনএস বিডি তে চাকুরী পাইয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে সহজ ডট কম এ চুক্তিবদ্ধ হলে কমলাপুর শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে তারও চাকুরী বহাল থাকে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সোহেল ঢালী সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করে। গ্রেফতারকৃত সোহেল অফিস সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় প্লাটফর্মের টিকেট বুকিং কাউন্টারে বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত আনাগোনা থাকতো। একপর্যায়ে সোহেল কাউন্টারে টিকেট বুকিং এর দায়িত্বে থাকা কাউন্টারম্যানদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে এবং কাউন্টারম্যানদের যোগসাজশে বিভিন্ন কারসাজি করে বিপুল পরিমাণ টিকেট সংগ্রহ করে কালোবাজির মাধ্যমে অধিক মূল্যে বিক্রি করতো।

তিনি আরও জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে ঢালী সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যসহ গ্রেফতারকৃত সুমন, শাহজালাল, জাহাঙ্গীর, জয়নাল, ও রাসেল সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানকে ট্রেনের টিকেটের চাহিদা দিতো। পরবর্তীতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত মিজান ঢালী অবৈধভাবে ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করে কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রয়ের জন্য তাদের নিকট সরবরাহ করতো।গ্রেফতারকৃত সুমন রেলওয়ের সাথে একসময়ের চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সিএনএস বিডি তে চাকুরী করতো। পরবর্তীতে সহজ ডট কম এর সাথে চুক্তি হওয়ার পর সে চাকুরী বাদ দিয়ে গ্রেফতারকৃত মিজান ও সোহেল এর মাধ্যমে ঢালী সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়ে অবৈধভাবে সংগ্রহকৃত ট্রেনের টিকেটসমূহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রয় শুরু করে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত শাহজালাল একজন পাঠাও চালক, গ্রেফতারকৃত জাহাঙ্গীর কমলাপুরে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেলের ক্লিনার, গ্রেফতারকৃত রাসেল একই আবাসিক হোটেলের বয় এবং গ্রেফতারকৃত জয়নাল অপর একটি আবাসিক হোটেলের বয়। তারা তাদের এসকল কর্মস্থলে কাজের পাশাপাশি সবসময় অবৈধ উপায়ে টিকেট প্রত্যাশী যাত্রী যোগাড় করে কালোবাজারির মাধ্যমে সংগ্রহকৃত টিকেটগুলো নির্ধারিত মূল্যের চাইতে প্রায় ২ গুণ বেশি মূল্যে বিক্রয় করতো। হোয়াটস্অ্যাপের মাধ্যমে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ট্রেনের টিকেট প্রত্যাশীদের নিকট অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে টিকেট প্রেরণ করতো।

এছাড়া গ্রেফতারকৃত নিউটন ২০১২ সালে স্টেশন সাপোর্ট হিসেবে সিএনএস বিডি তে যোগদান করে ২০১৬ সালে সার্ভার অপারেটর এর দায়িত্ব পায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে সহজ ডট কম এ চুক্তিবদ্ধ হলেও তার চাকুরী বহাল থাকে এবং পুনরায় সার্ভার অপারেটর এর দায়িত্ব পায়। সে সার্ভার অপারেটর হওয়ায় বিভিন্ন ট্রেনের সিডিউল ও টিকেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতো বিধায় এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের মূলহোতা মিজানকে তথ্য প্রদান করতো । গ্রেফতারকৃত সবুর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহজ ডট কম এর স্টেশন রিপ্রেজেন্টেটিপ হিসেবে চাকুরী করতো। গ্রেফতারকৃত সবুর সিন্ডিকেটের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত মিজান এর সাথে ট্রেনের টিকেট কালোবাজির সাথে জড়িত ছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪