স্টাফ রিপোর্টার-
কিশোর গ্যাং এর গ্রুপ-লীডারসহ ২০ জনকে দেশীয় অস্ত্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল (১৭ মার্চ) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত র্যাব-৩ এর পৃথক পৃথক আভিযানিক দল ডিএমপির কদমতলী ও হাতিরঝিল থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোঃ ইয়াসিন আরাফাত (১৮), রাশেদ হাজারী (২২), মোঃ রাসেল ইসলাম (১৯), মোঃ তামিম মিয়া (২০), রাতুল হাসান (১৮), মমিনুল ইসলাম হৃদয় (২১), মোঃ রাকিব (২০), সাইফুল ইসলাম সিয়াম (১৯), আশিকুল ইসলাম স্বাধীন (১৯), মোঃ ফয়সাল হোসেন রাব্বি (২০), মোঃ নাঈম (১৯), মোঃ হাসান আহমেদ অনিক (২০), মোঃ আমিনুল ইসলাম (১৯), মোঃ রাফিন (১৮), মোঃ আল আমিন (১৮), মোঃ রনিউজ্জামান (২০), মোঃ রাকিব (২০), মোহন মিয়া (২২), মোঃ নাঈম মিয়া (২০) এবং নাহিদ (১৮)। তাদের নিকট থেকে ১ টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ১ টি শাবল, ৩ টি ছোরা, ১ টি হাসুয়া, ৪ টি চাকু, ২ টি ক্ষুর, ২ টি হেক্সোব্লেড, ২৫ পুরিয়া গাঁজা, ৬ টি মোবাইল এবং চাঁদা উত্তোলনের নগদ ৪৫৪০/- উদ্ধার করে র্যাব সদস্যরা।
সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে র্যাব -৩ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি এসময় জানান, গ্রেফতারকৃতরা কেউ কেউ পেশায় অটো-রিক্সা চালক, ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী, দিনমজুর, দোকানের কর্মচারী, নির্মাণ শ্রমিক, পুরাতন মালামাল ক্রেতা, সবজি বিক্রেতা হলেও মূল পেশার আড়ালে তারা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত। তাদের মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় চুরি, ডাকাতির চেষ্টা, অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায়, মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, দস্যুতা, অস্ত্র ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত দের মধ্যে ‘ফয়েজ-আরাফাত’ গ্রুপের ৭ জন, ‘সিয়াম’ গ্রুপের ৪ জন, ‘অনিক’ গ্রুপের ৪ জন এবং ‘কুনিপাড়া স্কোয়াড’ গ্রুপের ৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এছাড়া এই গ্রুপ গুলো দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নামে পেশীশক্তি প্রদর্শন করে আসছিল। তারা মাদক সেবন, সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির সঞ্চার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদক সেবন, অস্ত্র প্রদর্শন এবং অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বললন, রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় ফয়েজ-আরাফাত কিশোরগ্যাং গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপটি সন্ত্রাসী মোঃ ইয়াসিন আরাফাত ও তার ফুফাতো ভাই ফয়েজের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচালিত হয়ে আসছিল। এর মধ্যে এই গ্রুপের অন্যতম মূলহোতা আরাফাত উক্ত অভিযানে গ্রেফতার হয় এবং ফয়েজ বর্তমানে রিহাব সেন্টারে আছে। গ্রেফতারকৃত ফয়েজ-আরাফাত গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর শ্যামপুর ও কদমতলী এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ইভটিজিং, মারধর, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িত।
এছাড়াও হাতিরঝিল এলাকায় সিয়াম এবং অনিক গ্রুপ দুইটি দীর্ঘদিন যাবৎ সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম সিয়াম এবং হাসান আহমেদ অনিক এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছে। এরা রাজধানীর হাতিরঝিল এবং এর আশেপাশের এলাকায় সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল দ্বারা বিকট শব্দ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যেতো। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাতিরঝিল এলাকাসহ আশপাশ এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত ছিল।
অপরদিকে গ্রেফতারকৃত কুনিপাড়া স্কোয়াড গ্রুপটি হাতিরঝিল ও এর আশপাশের এলাকায় ধৃত মূলহোতা রনিউজ্জামানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়ে আসছিল। এই গ্রুপটির মূলহোতা রনিউজ্জামান অনলাইনভিত্তিক অবৈধ বিটকয়েন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। টেলিগ্রামে নোটকয়েন নামক ফিচার ব্যবহার করে বিটকয়েনের মাধমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অনলাইন জুয়ারিদের সঙ্গে জুয়া খেলতো।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, কিশোর গ্যাং বা গ্যাং কালচার উঠতি বয়সী ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এসকল গ্যাংসমূহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সংঘর্ষ সমাজে ব্যাপক মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।গ্যাংসমূহের পারস্পরিক মারামারি, ক্ষমতা জাহির করতে প্রকাশ্য অস্ত্রের ব্যবহার, মাদক সেবন, যত্রতত্র ছিনতাই, প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান প্রভৃতি সমাজে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এমন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলে অনেক সময় খুন করতেও এরা দ্বিধাবোধ করেনা। রাস্তাঘাটে নারীদের ইভটিজিং ও শ্লীলতাহানি এসকল সদস্যদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্ম। এছাড়াও তারা বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং এর মাধ্যমে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে এবং নিরীহ মানুষদের কাছ থেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। এ সকল সন্ত্রাসীদের হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা রুজু হয়। অতি সম্প্রতি রাজধানীর কদমতলী, হাতিরঝিল ও এর আশেপাশের এলাকায় কিশোরগ্যাং কর্তৃক বেশ কয়েকটি ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে তথ্য পায় র্যাব।ফলশ্রুতিতে র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করা হয় এবং অভিযানের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র্যাব ৩ এর মিডিয়া অফিসার সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ শামীম হোসেন।