স্টাফ রিপোর্টার-
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা চিকিৎসকদের মান- সম্মান এমন এক জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো, কোনও একদিন এ দেশের মানুষ চিকিৎসকদের দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নিচু করতে হবে। এটি করতে হলে আমাদের একটু ধৈর্য ধরে রোগীদের কথা শুনতে হবে। ধৈর্য নিয়ে রোগীদের সেবা দিতে হবে। এজন্য আমরা সময় মতো হাসপাতালে যাবো, আসবো। এদেশের সাধারণ মানুষ বেশি কিছু চায় না। তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে কথা বলা, সেবা দেওয়া, কেমন আছেন এটুকু বলা, তারা আশা করে।
শনিবার (৯ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ-ব্লক অডিটোরিয়ামে ‘মার্চ ২০২৪ সেশনে এমডি/এমএস প্রোগ্রাম ফেজ ‘এ’-তে ভর্তি হওয়া রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের ইনডাকশন প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা উন্নতি করা, আমাদের দিয়ে সেটি সম্ভব । আমাদের মনে রাখতে হবে, ঢাকায় সব কিছু না। আমরা চিকিৎসকদের ইনটেনসিভ দেবো। আমাদের প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে এ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবো। আমি বিশ্বাস করি, যদি তাকে সঠিক তথ্য দিয়ে বুঝাতে পারি, তবে তিনি চিকিৎসকদের জন্য সবকিছু করবেন। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী এই প্রথম দুই জন চিকিৎসককে দায়িত্ব দিয়েছেন। রমজান মাসে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে মিটিং করবো। এটি যাতে সংসদে পাস হয়, সেজন্য আমি চেষ্টা করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মান পৃথিবীর কোনও দেশের চিকিৎসকদের তুলনায় কম নয়। বাংলাদেশের চিকিৎসকদের যে মেধা আছে, তার অনেক প্রমাণ আছে। আমরা ভুটান থেকে রোগী নিয়ে এসে চিকিৎসা দিচ্ছি। রোগী যে বাইরে যাচ্ছে এমন নয়— ভারত থেকেও রোগী আসছে। হাঙ্গেরি থেকে যে চিকিৎসক দল জোড়া মাথা আলাদা করেছিল, সেই অপারেশনে রোগীদের অ্যানেস্থসিয়া হাঙ্গেরির চিকিৎসকরা দিতে পারেননি। তাদের অ্যানেসথেসিয়া দিয়েছিলেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা ইনডাকশনে রেসিডেন্ট হিসেবে বসে আছেন, তারা আগামী দিনের চিকিৎসক হিসেবে কাণ্ডারি। ডাক্তার ও রোগীদের ভালো সম্পর্ক অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে। শুধু ডাক্তাদের ওপর নির্ভর করে না। একটি হাসপাতালে ভালা কাজ একজন পরিচালক থেকে শুরু করে একজন অধ্যাপক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ওপরে নির্ভর করে। এদের সবার ওপর একটি হাসপাতালের সুনাম বৃদ্ধি নির্ভর করে।’
বিএসএমএমইউ জানায়, এবার ইনডাকশন প্রোগ্রামে এক হাজার ৪২৩ জন চিকিৎসক অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার জন্য শপথ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে রেসিডেন্টদের শপথ বাক্য পাঠ করান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখান থেকে ১২ হাজার চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ হিসেবে পাস করে বেড়িয়ে গেছেন। তারা জাতিকে সেবা দিচ্ছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হন, তাদের মেধার যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়। এজন্য নিজেদেরকে শাণিত করতে নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা ও ওয়ার্ডে কাজ করতে হয়। এখানে ক্লাস পরীক্ষা যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে হয়।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা আরও দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি এক লাখে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকা উচিত। কিন্তু আমরা জানি, অ্যানেসথেসিয়া, ইএনটির মতো বিষয়ে সে সংখ্যক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আমাদের নেই। বেসিক সাবজেক্টে একই অবস্থা। গতকাল (শুক্রবার) আমাদের এমফিল এনাটমিতে যে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, সেখানে আমরা ভর্তি করতে পারি ৩৬ জন। কিন্তু ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন মাত্র ২৬ জন। চান্স পেয়েছেন ১৪ জন। গত এমডি এনাটমি কোর্সের ভর্তির পরীক্ষার সময় দেখলাম— সিট ৭১টি, আবেদন করেছেন ৪৯ জন, কিন্তু চান্স পেয়েছেন ২৯ জন। এখনও আমরা বেসিক সাবজেক্টে চিকিৎসকদের আকৃষ্ট করতে পারছি না। বেসিক সাবজেক্ট বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মাকোলোজি, ফরেনসিক মেডিসিন ও অ্যানেসথেসিয়ার মতো বিষয়ে ইনটেনসিভ দিতে হবে। তাদের বয়স বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায়, আমরা অভিজ্ঞ কাউকে পাবো না। আমরা গত তিন বছরে বেসিক সাবজেক্টে অনেক আসন বাড়িয়েছি।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, শিশু অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার, বেসিক সাইন্স ও প্যারা ক্লিনিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ইনস্টিটিটিউটের প্রধানরা বক্তব্য রাখেন।