স্টাফ রিপোর্টার- বিদায়ী বছরে বিভিন্ন প্রতারনার দায়ে ৪৯২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এছাড়া বিভিন্ন প্রতারণার সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার( ২২ জানুয়ারি) বিকেলে র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য প্রতারণায় মোট গ্রেফতার সম্পর্কে সংস্থাটি জানায়, গত ২৩ জানুয়ারি র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেওয়া সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করে।
এছাড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা’ নাম ব্যবহার করে আড়ালে ‘এমএলএম’ ব্যবসার মাধ্যমে কয়েক হাজার গ্রাহক থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোঃ আব্দুল কাদেরসহ ১১ জন প্রতারক’কে গ্রেফতার করে। এরপর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে র্যাব-৪ রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয়ে অভিযানের নামে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী আত্মসাতের মূলহোতা আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদ (৩০) কে গ্রেফতার করে। এসময় উদ্ধার করা হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়পত্র এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পোষাক পরিহিত ছবি। এছাড়া গত ৯ এপ্রিল র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে “পাশে থাকা ফাউন্ডেশন” নামক একটি ভুয়া প্রতারক সংগঠনের চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদ হাসান (২৬) এবং তার স্ত্রী ও অন্যতম সহযোগী সুরমা আক্তার ইশা (২০) কে গ্রেফতার করে। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে ৫০টি প্রতারনার বাজার কার্ড, ০২টি খাদ্য তালিকার কার্ড ও ০২টি মোবাইল ফোন।
পরবর্তীততে গত ২১ মে রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর, কাফরুল ও গাজীপুর সদর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে “সিএনএস লিঃ বাংলাদেশ” এর ওয়েবসাইট হ্যাক করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ শাহরিয়ার ইসলাম (২৬) এবং তার ৫ সহযোগী ২। মোঃ আজীম হোসেন (২৭), ঝিনাইদহ ৩। মোঃ শিমুল ভূঁইয়া (৩২), নারায়ণগঞ্জ ৪। রুবেল মাহমুদ (৩৩), ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৫। ফয়সাল আহাম্মদ (২৩), চাঁদপুর ও ৬। আনিচুর রহমান (২৩), চাঁদপুর’দেরকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিপিইউ, মোবাইল ফোন, সীমকার্ড, পেনড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও অন্যান্য সরঞ্জামাদিসহ নগদ ১,৮৯,৬৫৯ টাকা।
এছাড়া গত ২৪ মে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিদেশ থেকে অতি মূল্যবান পার্সেল পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতকারী আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূলহোতা ১। CHARLES IFENNADE UDEZUE (২৭), দেশ- নাইজেরিয়া, ও তার সহযোগী ২। FRANK COCO OBIERKS (৩৫), দেশ- নাইজেরিয়া, ৩। শফি মোল্লা (৩৬), ৪। মোছাঃ মৌসুমি খাতুন (২৭) দের গ্রেফতার করে। এসময় ০১টি মোটর সাইকেল, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০৮টি মোবাইল ফোনসহ প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া ইনভয়েস উদ্ধার করে র্যাব।
এছাড়া গত ১৫ আগস্ট রাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কাস্টমস্সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষকে চাকুরী দেয়া, বিদেশে পাঠানো, ভিসা তৈরি, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে মালামাল ছাড়িয়ে আনা, জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দালালি কার্যক্রম করে প্রতারণামূলকভাবে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ এবং কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীল ও স্টীকার গাড়ীতে ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ নজরুল ইসলাম (২৯) তার সহযোগী ২। মোঃ ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম (৪৭) ও ৩। মোঃ নাসির উদ্দিন (২৬) ৪। সৈয়দ মোঃ এনায়েত (৪৮) দের গ্রেফতার করে।
এছাড়া গত ১৭ অক্টোবর রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় ও সুসম্পর্কের কথা বলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তি, গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও পদোন্নতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দেয়াসহ বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের মূলহোতা আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া (৩৯) কে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ১টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, এ্যামুনেশন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত গাড়ী।
র্যাব বলছে, বর্তমানে প্রতারণা এক ধরনের সামাজিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে যা থেকে প্রতারিত হচ্ছে সকল পেশার মানুষ। সুতরাং প্রতারণা থেকে বাঁচতে হলে সামাজিকভাবে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা গড়ে তুলতে র্যাব সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাবে।