স্টাফ রিপোর্টার-
নাটোরের সিংড়া এলাকায় যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী’কে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামীকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম মো: ফরহাদ হোসেন মন্ডল (৪০)। গত ২০১১ সালে নিজ স্ত্রী’কে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে সে।
রবিবার (২১ জানুয়ারি) সকালে র্যাব -৩ এর অধিনায়ক লে: কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যম’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, র্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মোঃ ফরহাদ মন্ডল (৪০) কে গতকাল শনিবার রাত ৮ টা ১০ মিনিটে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ঘটনার বিবরনে তিনি বলেন, আসামী ফরহাদ মন্ডলের স্ত্রী মোছাঃ ফাতেমা বেগমকে বিগত ২০০১ সালে ইসলামী শরিয়তের বিধান মোতাবেক বিয়ে করে। সেসময় সময় যৌতুক হিসেবে নগদ পনের হাজার টাকা শ্বশুরের নিকট হতে গ্রহন করে। পরবর্তীতে তাদের পরিবারে দুইটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। একপর্যায়ে স্ত্রীকে আরও যৌতুকের টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। স্বামীর কথায় ফাতেমা তার বাবা-মাকে যৌতুকের বিষয়টি জানায়। তার বাবার পরিবারেও অভাব অনটনে থাকায় আর যৌতুকের টাকা দিতে পারবেনা বলে জানায়। বিষয়টি জানতে পেরে আসামী ফরহাদ ও তার বাবা-মা এবং বড় ভাই স্ত্রী ফাতেমাকে অমানুষিক নির্যাতন করতে শুরু করে। শ্বশুর বাড়ির অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ফাতেমা তার বাবা-মাকে বিষয়টি জানায়। বাবা-মা মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক দফায় আরো ৫০,০০০/- টাকা যৌতুক হিসেবে প্রদান করে।
পরবর্তীতে শ্বশুর বাড়ি থেকে দেয়া যৌতুকের টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় আবারও আসামি তার বাবা-মা, বড়ভাই মিলে ফাতেমা’কে আরও টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। ফাতেমা তার বাবা-মাকে জানালে তাদের কাছে টাকা না থাকায় ঘটনার ১১/১২ দিন আগে মেয়ের জামাইকে একটি গরুর বাছুর প্রদান করে। কিন্তু নগদ টাকা না দেয়ায় গত ২০১১ সালের ৭ ডিসেম্বর রাতে ফাতেমাকে তার স্বামী ফরহাদ অমানুষিকভাবে শারিরিক নির্যাতন করে এবং একপর্যায়ে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ঘটনার পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে ফাতেমার বাবা-মাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর দেয়। ভিকটিমের বাবা-মা ঘটনাস্থলে এসে তার মেয়েকে আসামী ফরহাদের কক্ষের মেঝেতে রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এ ঘটনার পরে ৯ ডিসেম্বর ফাতেমার বাবা বাদী হয়ে আসামী ফরহাদ মন্ডল, তার বড় ভাই মোঃ ফজল, বাবা হামিদ আলী এবং মা মোছাঃ ফরিদা বেগমকে আসামী করে নাটোর জেলার সিংড়া থানায় যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর কারণে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ ফরহাদকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
অধিনায়ক আরও জানান, ফরহাদ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেফতার হয়ে ৭/৮ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্তি পেয়ে এক বছর পর সে বিদেশে (ওমানে) চলে যায়। দীর্ঘ ৩ বছর ওমানে প্রবাস জীবন শেষ করে পূনরায় বাংলাদেশে নিজ বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে। বিদেশ থেকে আসার পর সে দ্বিতীয় বিবাহ করে। বিবাহ করে তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে শুরু করে। সেখানে সে একটি গার্মেন্টসে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
ঘটনার দীর্ঘ ১৩ বছর পর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিজ্ঞ আদালত গত ১৭ জানুয়ারি গ্রেফতারকৃত ফরহাদের মৃত্যুদন্ড রায় প্রদান করেন। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।