স্টাফ রিপোর্টার –
আমদানির অনুমতিপত্রের (আইপি) মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের পর এবার ভারত থেকে আলু আমদানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের বাজারে আবারও আলুর দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও ১৫ দিন আমদানির অনুমতির মেয়াদ বাড়ানোর দাবি বন্দরের আমদানিকারকদের।
হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আলু আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে বন্দর দিয়ে তিন ধরনের আলু আমদানি করা হচ্ছে; পুরনো লাল বর্ণের কার্ডিনাল জাতের আলু, পুরনো সাদা বর্ণের আলু ও নতুন আলু। বর্তমানে বন্দরে কার্ডিনাল জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে; যা কয়েক দিন আগেও ৪১ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
অধিকাংশ আমদানিকারকের ১৫ ডিসেম্বর থেকে আলু আমদানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বাড়তি দামে বিক্রির আশায় আলু বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তারা ৩৮ থেকে ৪০ টাকা দাম হাঁকছেন ওই জাতের আলু, তবে ওই দামে বিক্রি হয়নি। সাদা বর্ণের গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা কেজি দরে, যা কয়েক দিন আগেও একই দামে বিক্রি হয়েছিল।
এ ছাড়া নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৪ টাকা কেজি দরে, যা আগে ৪১ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে হিলি বাজারে খুচরায় কাটিনাল জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, আর নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে হঠাৎ দেশে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে আলুর বাজার। জরিমানা অভিযানসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের পরও আলুর বাজার স্থিতিশীল হয়নি। এমন অবস্থায় আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। এর ফলে গত ২ নভেম্বর থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আলু আমদানি শুরু হয়। এতে দেশের বাজারে আলুর দাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
হিলি বাজারের আলু ব্যবসায়ী মমিনুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ সরবরাহ সংকটের কারণে দেশে আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। আলুর দাম কয়েক দফায় বাড়তে বাড়তে ৬০ টাকায় উঠে যায়। বর্তমানে ভারত থেকে আলু আমদানি হওয়ায় ভারতীয় আলুর দাম যেমন কম রয়েছে, তেমনি দেশীয় আলুর দাম কমতির দিকে। আমদানি অব্যাহত থাকলে বাজারে পর্যাপ্ত আলুর সরবরাহ থাকবে। এতে দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই দেশীয় নতুন আলু আসতে শুরু করেছে, তবে দাম এখনও চড়া। বর্তমানে হিলিতে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। এ অবস্থায় যদি ভারত থেকে আলু আমদানি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পেঁয়াজের মতো আলুর দামও বাড়তে পারে।
হিলি স্থলবন্দরে আলু কিনতে আসা পাইকার আইয়ুব হোসেন বলেন, দেশের বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় আমরা হিলি স্থলবন্দর থেকে আমদানি করা আলু কিনে দেশের বিভিন্ন মোকামে সরবরাহ করে আসছিলাম। দাম কম থাকায় কিনতে যেমন সুবিধা হচ্ছিল, পুঁজিও কম লাগছিল; তেমনি চাহিদা মোতাবেক মোকামগুলোতে আলু পাঠানো যাচ্ছিল। কিন্তু আইপির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার বন্দর দিয়ে শেষ দিনের মতো আলু আমদানি হবে। এরপর থেকে বন্দর দিয়ে আলু আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। এই সুযোগে আমদানিকারকরা অনেকেই কম দামে আলু বিক্রি করছেন না, বিশেষ করে পুরানো আলুগুলো।
তিনি আরও বলেন, আগের দিনের তুলনায় আজ কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা করে দাম বাড়তি চাইছেন। পুরানো আলুগুলো কিছুদিন রাখা যাবে, সে কারণে তারা সেগুলো কম দামে বিক্রি করছেন না। তবে নতুন আলু রাখা যাবে না, সেগুলো পচে নষ্ট হয়ে যাবে। যার কারণে নতুন আলু আগের দামেই ছেড়ে দিচ্ছেন আমদানিকারকরা। এতে আলু কিনতে গিয়ে বিপাকের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বাড়তি দামের কারণে আলু না কিনে ফিরে এসেছি। দেখি আগামীকাল কী দাম হয়।
হিলি স্থলবন্দরের আলু আমদানিকারক হারুন উর রশীদ বলেন, দেশের বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অনুমতি পাওয়া আমদানিকারকরা ভারত থেকে আলু আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই বন্দর দিয়ে আলু আমদানি অব্যাহত ছিল। তবে সরকার যে আলু আমদানির মেয়াদ নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত, সেই মোতাবেক শুক্রবার পর্যন্ত আলু আমদানির সময়সীমা রয়েছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকে। তাই বৃহস্পতিবার বন্দর দিয়ে আলু আমদানির পর শুক্রবার থেকে আলু আমদানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তবে সময়টা যদি আরও একটু কিছুদিনের জন্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভালো হয়। আর যদি মেয়াদ না বাড়ানো হয় আর আমদানি বন্ধ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে দেশে আলুর দাম আবারও ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু দেশে সবেমাত্র নতুন আলু উঠতে শুরু করেছে পর্যাপ্ত পরিমাএণ আলু উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। যার কারণে এই সময়টাতে দেশের বাজারে আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ করবো আলু আমদানির মেয়াদের সময়সীমা আরও ১০ থেকে ১৫ দিন মতো বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
আমদানিকারক শাহিনুর রেজা বলেন, সরকার যে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছিল, সেসব আলুই বন্দরের অনুমতি পাওয়া আমদানিকারকরা আমদানি করতে পারেননি। অনেক আমদানিকারকের আলু ভারতে পাইপলাইনে রয়েছে, যা বিভিন্ন সড়কে ট্রাকবোঝাই অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। কুয়াশার কারণে সময় বেশি লাগায় এসব আলুবাহী ট্রাক ঢুকতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, আমদানির মেয়াদের সময়সীমা আরও যেন কিছু দিন বাড়ানো হয়।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আ বন্দর দিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক করে আলু আমদানি হলেও চলতি সপ্তাহের প্রথম থেকেই বন্দর দিয়ে আলু আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। বন্দর দিয়ে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন গত শনিবার ৫৮টি ট্রাকে ১ হাজার ৫৯১ টন আলু আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া রবিবার বন্দর দিয়ে ৫৬টি ট্রাকে ১ হাজার ৫১৬ টন আলু আমদানি হয়েছে। সোমবার বন্দর দিয়ে ৫৭টি ট্রাকে ১ হাজার ৫৭১ টন আলু আমদানি হয়েছে। মঙ্গলবার বন্দর দিয়ে ৭৬টি ট্রাকে ২ হাজার ১১ টন আলু আমদানি হয়। আজ বুধবার রেকর্ড সংখ্যক ৮৬টি ট্রাকে ২ হাজার ২৬০ টন আলু আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, দেশে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ৩০ অক্টোবর সরকার আলু আমদানির অনুমতিপত্র বা ইমপোর্ট পারমিট দেয়। সেই ইমপোর্ট পারমিটের মেয়াদ ছিল গত ৩০ নভেম্বর, যা ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
এই কর্মকর্তা আরওবলেন, ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ও বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির মেয়াদের সময়সীমা ১৫ দিন বাড়িয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করে সরকার। এখন পর্যন্ত সেই নির্দেশনাই রয়েছে, ফলে ১৫ ডিসেম্বরের পর আর বন্দর দিয়ে আলু আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সরকার যদি আমদানির মেয়াদ বাড়ায়, সে ক্ষেত্রে আবারও আলু আমদানি হতে পারে।