নিজস্ব প্রতিবেদক-
৩০ বছর আগের বহুল আলোচিত বাবা ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আরিফ ওরফে সরিফুল ইসলামকে (৫২) গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ১৯৯৩ সালের কেরানীগঞ্জে বাবা ছেলেকে হত্যার ঘটনায় পলাকত আসামি।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার আরিফ বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। সে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এসে তার নাম ও পরিচয় গোপন করে মো. সরিফুল ইসলাম নামে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন এবং ঢেউটিন ফ্যাক্টরিতে কাজ নেন। পরে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মুদি ও লন্ড্রি দোকানের ব্যবসা করে আসছিলো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯৯৩ সালে ১৩ই জুলাই কেরানীগঞ্জ এলাকায় মালোপাড়া বারিশুর বাজারে একটি মুদি দোকানে ব্যবসায়ী শরিফুল ও তার ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। বাবা-ছেলের হত্যার ঘটনায় তখন এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের তৈরি হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, নিহত শরিফুলের দোকানে প্রায়ই মধ্যরাত পর্যন্ত বেচা-কেনা হতো। তার দুই ছেলে খোকন (তৎকালীন বয়স ৯) ও শাহজাহান (তৎকালীন বয়স ১২) প্রায় প্রতিদিনই রাতে বাবার জন্য খাবার নিয়ে আসতেন এবং রাতের খাবার শেষে তারা দোকানেই ঘুমিয়ে পড়তেন। অন্যদিকে গ্রেফতার আরিফ ও তার অন্যান্য সহযোগীরা কেরানীগঞ্জ এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিল। তারা কেরানীগঞ্জ এলাকায় মাদক সেবন ও মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
গ্রেফতার আরিফ ও তার সহযোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রায়শই রাতে স্থানীয় বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায়, জোরপূর্বক ক্যাশ বক্স থেকে নগদ টাকা ও বিভিন্ন মালামাল ছিনিয়ে নিতো। ঘটনার দিন দোকানি শরিফুল রাতে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এবং দোকানের পেছনের অংশে তার দুই ছেলে ঘুমাচ্ছিল। ওই সময় শরিফুলের দোকানে আরিফ ও তার সহযোগীরা এসে সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল জোর করে ছিনিয়ে নিলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।
এসময় দোকানের ক্যাশ বক্স থেকে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে দোকানি শরিফ বাধা দেয়। এতে আরিফ ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে শরিফুলকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তার চিৎকার শুনে দোকানের পেছনের অংশে ঘুমিয়ে থাকা দুই ছেলে বাবাকে বাঁচাতে ছুটে আসে। কিন্তু তার দুই ছেলেকেও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরদিন ভোরে স্থানীয়রা শরিফুলের বড় ছেলেকে খবর দেয়। শরিফুলের বড় ছেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় তার বাবা শরীফ ও তার ছোট ভাই খোকন মারা গেছেন এবং তার আরেক ভাই শাহজাহান গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় শাহজাহানকে আহত অবস্থায় স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৯৯৪ সালের ২৬ আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই আদালত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার আরিফসহ ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট কর্তৃক পুনঃবিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠানো হয়। নিম্ন আদালত সকল বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার আরিফসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে পূর্বে প্রদানকৃত মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, রায় ঘোষণার সময় শফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ওরফে নজু এবং মিষ্টার ব্যতীত অপর দুই আসামি মো. আরিফ ও মো. মাসুদ পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত সাজা পরোয়ানা ও গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করেন। র্যাব পলাতক আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পলাতক আসামি মো. আরিফ ওরফে সরিফুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।