নিজস্ব প্রতিবেদক-
কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ। আর ফাইলেরিয়া নির্মূলে দক্ষিণ এশিয়ায় চতুর্থ। এ অনন্য অর্জন ধরে রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বুধবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লুতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। এ অর্জনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আকতারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যেসব এলাকা থেকে ফাইলেরিয়া ও কালাজ্বর নির্মূল হয়েছে সেসব এলাকার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও যোগ দেন অনুষ্ঠানে।
কালাজ্বর একটি প্রাণঘাতী রোগ। এটি ভিসারাল লিশম্যানিয়াসিস হিসেবে পরিচিত। এটি লিশম্যানিয়া পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট যা স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই (বেলেমাছি) কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। সময়মত চিকিৎসা না হলে প্রায় ৯৫ শতাংশ কালাজ্বর রোগীর মৃত্যু হয়। এ জ্বরের প্রধান লক্ষনসমূহ অনিয়মিত দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, প্লীহা এবং যকৃতের বৃদ্ধি, ওজন হ্রাস, রক্ত স্বল্পতা। কালাজ্বর একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ যা সমাজের অবহেলিত ও প্রান্তিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমিত হয়। এ রোগের প্রার্দুভাব বিশ্বের প্রায় ১০০ দেশে দেখা যায় এবং প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে থাকে।
ব্রাজিল, পূর্ব আফ্রিকা এবং ভারতবর্ষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। প্রতিবছর আনুমানিক ৫০ হাজার থেকে ৯০ হাজার নতুন কালাজ্বর রোগী বিশ্বব্যাপী শনাক্ত হয়। ১৮২০, ১৮৬০, ১৯২০ এবং ১৯৪০-এর দশকে বাংলায় কালাজ্বর মহামারি দেখা দেয়।
১৮২৪ সালে যশোরের মোহাম্মদপুর গ্রামে সর্বপ্রথম কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ১৯ শতকের মধ্যে এ রোগটি পশ্চিম পূর্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ২০ শতকজুড়ে কালাজ্বর দক্ষিণ এশিয়ায় একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়।
বাংলাদেশে ৭০ এর দশকে বিভিন্ন এলাকায় কিছু সংখ্যক কালাজ্বরের রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল এবং ৮০ সালে পাবনা জেলায় এর প্রার্দুভাব ঘটেছিল। তারপর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশে কালাজ্বর সংক্রমণ হয়েছে।
সম্প্রতি ভয়াবহ কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বে বাংলাদেশকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ৩১ অক্টোবর দুপুরে ভারতের দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সম্মেলনে এ স্বীকৃতির সনদপত্র দেওয়া হয়। এটি গ্রহণ করেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।