ডেস্ক রিপোর্ট-
‘দৈত্য ঘাতক’ হিসেবে আফগানরা যতই নিজেদের মেলে ধরুক, তাদের কাছে পাকিস্তান অজেয় এক প্রতিপক্ষের নাম। বিশ্বকাপ তো নয়ই, ওয়ানডেতেও কখনো প্রতিবেশী দেশটিকে হারাতে পারেনি আফগানিস্তান। ওয়ানডেতে মোট সাতবার মুখোমুখি হয়েছে তারা, সাতবারই জিতেছে পাকিস্তান। মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানে এমন পিছিয়ে থাকার পরও ক্রিকেট মাঠে যখন মুখোমুখি হয় দুই দল—ফিরে আসে অন্য উত্তেজনা।
আফগানিস্তানের ক্রিকেটের উত্থানে বড় অবদান পাকিস্তানের। কিন্তু ‘নুন’ খেয়ে ‘গুণ’ না গেয়ে যদি সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখায় আফগানিস্তান, সেটা কি সহজে মেনে নিতে পারে পাকিস্তানের দর্শকেরা! ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শারজায় হারতে হারতে পাকিস্তানের জিতে যাওয়া ম্যাচে পাকিস্তানি ব্যাটার আসিফ আলীর সঙ্গে প্রায় লেগেই গিয়েছিল আফগান বোলার ফরিদ মালিকের। ওই ঘটনার পর পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া ছিল এমন—অকৃতজ্ঞ, যাদের দুধভাত খেয়ে মানুষ, তাদের দিকেই ছোবল তোলা!
শারজার ওই ঘটনার পর যতবারই ক্রিকেট মাঠে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল, ততবারই ‘কোনো অনুকম্পা নয়’ নীতি নিয়ে খেলেছে পাকিস্তান। এমন পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কেও টানাপোড়েনের জন্ম দিয়েছে। তালেবানরা সবশেষ ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় জঙ্গি হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে পাকিস্তান তালেবানকে দোষারোপ করলেও এসব ঘটনায় নিজেদের হাত থাকার কথা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে তালেবান প্রশাসন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে বসবাসরত হাজার হাজার আফগানকে দেশ থেকে বিতাড়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। দুই দেশের সম্পর্কের এই তিক্ততার মধ্যেই আজ চেন্নাইয়ে মুখোমুখি পাকিস্তান-আফগানিস্তান।
মাঠের লড়াই শুরুর আগে ম্যাচকে ঘিরে অন্য উত্তেজনার আঁচ পাচ্ছেন আফগানিস্তানের ইংলিশ কোচ জোনাথন ট্রট। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমি মনে করি তাদের (আফগান খেলোয়াড়েরা) জন্য এটা এমন একটা দ্বৈরথ, যা তাদের রোমাঞ্চিত করে। এই দ্বৈরথ অতীতের আবেগকে টেনে নিয়ে আসে। তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইও আছে। আশা করি আগামীকাল (আজ) খেলাটা উত্তেজনা ছড়াবে না এবং আমরা বড় ব্যবধানে জিতব। দ্বৈরথের যে প্রকৃতি, তাতে আমার এটাই বলা উচিত।’
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচের দুটি জিতেছে পাকিস্তান। দুই ম্যাচ হারায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের জয় পাওয়াটা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর আফগানরা হারানোর কিছু নেই মন্ত্রে উজ্জীবিত। জোনাথন ট্রট বললেন, ‘দুই দলেরই পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। তবে দুই দলই জয় পেতে মরিয়া।’
ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যান অসম একটা ম্যাচেরই ছবি আঁকে। কিন্তু এই বিশ্বকাপেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে আফগানরা প্রমাণ দিয়েছে, নিজেদের দিনে যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারে তারা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দিল্লির সে ম্যাচে সফল ছিলেন আফগানিস্তানের তিন স্পিনার রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান ও মোহাম্মদ নবী। চেন্নাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে হলে বিশ্বমানের এই স্পিনাররাই ভরসা আফগানিস্তানের। তবে ট্রট জানেন, পাকিস্তানেরও রয়েছে ভালো স্পিনার। আর তাদের পেস আক্রমণ তো বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাই আজকের ম্যাচটা শুধুই স্পিনারদের লড়াই নয় বলেই মনে করেন ট্রট, ‘চেন্নাইয়ের উইকেট ভালো। তাই এটা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এটা দলের খেলা, শুধুই স্পিনারদের নয়। ম্যাচ জিততে সবারই অবদান লাগে। ব্যাটারদের বড় রান গড়তে হবে, পরে ব্যাট করতে হলে তাড়া করতে হবে বড় স্কোর।’