1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

জাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে মতবিনিময়ের আড়ালে নির্বাচনী প্রচারণার অভিযোগ

  • সময় : শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৩২

সৈকত ইসলাম, জাবি :

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেটের ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি পদে নির্বাচন আগামী সোমবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ‘উপাচার্যপন্থী’ হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ ও ‘উপাচার্যবিরোধী’ হিসেবে পরিচিত শিক্ষক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে দু’টি সংগঠন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে নির্বাচন উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম মতবিনিময়ের নামে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা মিলেছে। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও উপাচার্যের বক্তব্য মেলেনি। তবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ নেতৃবৃন্দ দাবি করেছেন, উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো শিক্ষকের সাথে মতবিনিময় করতে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ অক্টোবর বিকেলে নতুন প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের সাথে মতবিনিময় করেন উপাচার্য। বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ নামে ফেসবুক গ্রুপে বার্তা দিয়ে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকতে বলেছেন সংগঠনটির সদস্য সচিব অধ্যাপক বশির আহমেদ। এ নিয়ে ’শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক মো. নূরুল আলম যে কোনো শিক্ষকের সাথে মতবিনিময় করতে পারেন। তবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব বিষয়টি সমন্বয় করায় আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে উপাচার্য শিক্ষকদের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

এরপর গত ১২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপকদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয় ও ট্রেজারারের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। যদিও শিক্ষক ক্লাবের হোয়াটসঅ্যাপ এ সংক্রান্ত বার্তায় শিক্ষক সংগঠনটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষে অধ্যাপক আলমগীর কবির ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সহযোগী অধ্যাপক’ শব্দবন্ধ উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া আজ শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল চারটায় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, হাউস টিউটর ও সহকারী হাউজ টিউটরদের সাথে উপাচার্যের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নিগার সুলতানা এ সংক্রান্ত বার্তা সংশ্লিষ্টদের পাঠিয়েছেন। ওই সভার কিছু ছবি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যসহ হলের সাথে সংশ্লিষ্ট না এমন শিক্ষকরাও উপস্থিত রয়েছেন। এ নিয়ে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, হাউস টিউটর ও সহকারী হাউজ টিউটরদের মতবিনিময় করতেই পারেন, তবে এমন কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে বন্ধের দিন মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকেরা জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একটি দলনিরপেক্ষ পদ। এমনকি তাকে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে কর্মকর্তা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সিনেটের সভাপতি হিসেবে তার নিরপেক্ষতা সবসময় কাম্য, বিশেষত যে কোনো নির্বাচনের সময়ে। এখানে যেহেতু রিটার্নিং কর্মকর্তা তার অধীনে কর্মরত থাকেন এবং তার উপর কোনো তদারককারী থাকেন না এজন্য তার নৈতিক, ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা। এটি না করা হলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সংকটে পড়বে।’

নির্বাচনী প্রচারবিধি নিয়ে তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের এ নির্বাচন কোনো ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নয়। এখানকার প্রতিটি ভোটার রাষ্ট্র পরিচালনার মত যোগ্যতা ও দক্ষতা রাখেন। এ কারণে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী বিধি ও এখানকার নির্বাচনী বিধি এক নয়। এখানে সবাই বিধিনিষেধের বাইরেও ন্যায় ও নীতিসঙ্গত আচরণ প্রদর্শন করবেন ধরে নিয়েই বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উপাচার্যের মতবিনিময় সভার বিষয়টি বিধিবদ্ধ আচরণ পরিপন্থী না হলেও তার নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এ বিষয়ে সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে ‘শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রার্থী ও আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-১৯৭৩’ প্রদানের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দিয়েছেন। এই মর্যাদা আমাদেরকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করেছে। এই অধ্যাদেশের সাথে একটি নির্বাচনী সংবিধি থাকলেও, তাতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী আচরণবিধি কেমন হবে- তা উল্লেখ নেই। তারপরও সাধারণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে সিনেটের সভাপতি উপাচার্যের কাছে আমরা নৈতিক, ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষ অবস্থান প্রত্যাশা করি।’

বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক মো. শামছুল আলম বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ছুটির দিনে হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, আবাসিক শিক্ষকদের সাথে উপাচার্যের মতবিনিময় সভা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন। উপাচার্য চাইলে যে কোনো কর্ম দিবসে প্রশাসনিক ভবনে মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে পারতেন। কিন্তু এভাবে ছুটির দিনে মতবিনিময় সভা আয়োজন সম্পূর্ণ নৈতিকতার পরিপন্থী যা সুষ্ঠু নির্বাচনী চেতনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

সিনেট নির্বাচনের আরেক প্রার্থী অধ্যাপক মোতাহের হোসেন বলেন, ‘এটা নজির বিহীন! অতীতে কখনো হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, আবাসিক শিক্ষকদের এভাবে নির্বাচনের আগে উপাচার্যের সাথে মিটিং করতে বাধ্য করেন নি। আমরা আশা করেছিলাম উপাচার্য মহোদয় সিনেট থেকে নির্বাচিত হওয়ায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন রাখবেন কিন্তু তার এহেন কর্মকান্ড গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। প্রশাসনের ছত্রছায়ায় কোন পক্ষ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের চেতনারও পরিপন্থী। আমরা আশা করছি সম্মানিত শিক্ষকগণ এর জবাব তাদের মূল্যবান ব্যালটের মাধ্যমে প্রদান করবেন।

এ বিষয়ে জানতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক বশির আহমেদকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলবো বলে কল কেটে দেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বা বু ম/ এস আর

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪