ডেস্ক রিপোর্ট-
জিততে হলে রেকর্ড বুক নতুন করে লিখতে হতো তবে সেটি আর হলো না। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় ইংলিশদের করা ৩৬৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ২২৭ রানে। আফগানদের হারিয়ে উড়তে থাকা সাকিব বাহিনীকে মাটিতে নামলো মালান-টপলিরা। ১৩৭ রানের বড় পরাজয়ে ধর্মশালা অধ্যায়ও শেষ হলো সাকিবদের ।
দুই দিন আগেও বাংলাদেশ একই মাঠে খেলেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে দাপট ছিল স্পিনারদের। সঙ্গত কারণেই আজ বাড়তি একজন স্পিনার নিয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে মাঠে নামে টাইগাররা। তাদের এ সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল, তা প্রমাণ হয়েছে প্রথম ইনিংসেই। সাকিব-মিরাজদের কচুকাটা করে রানের পাহাড় গড়ে ইংল্যান্ড। অথচ এই উইকেটেই লক্ষ্য তাড়ায় নেমে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। তবে লিটন দাস প্রমাণ করেছেন-এই উইকেটে রান করা খুব একটা কঠিন কাজ না। কিন্তু তামিম-শান্তরা উইকেট বিলিয়ে শুরুতেই দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। যেখানে থেকে আর ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৩৭ রানের হারে পয়েন্ট টেবিলেও বড় ধাক্কা খেল সাকিবের দল।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) হিমাচল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৬৪ রান তুলে ইংল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪০ রান করেন মালান।বাংলাদেশের হয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন মাহেদী। জবাবে খেলতে নেমে ৪৮ ওভার ২ বলে ২২৭ রান তুলে অলআউট হয় বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৭৬ রান এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। ইংলিশদের পক্ষে ৪টি উইকেট নেন রিস টপলি।
৩৬৫ রানের বিশাল টার্গেটে বোলিংয়ের মতো বাংলাদেশের ব্যাটিংও শুরু হয় যাচ্ছেতাই ভাবে। ৫০ রানের আগেই প্যাভিলিয়রে ফেরত চার বাংলাদেশী ব্যাটার। তবে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মধ্যে এক প্রান্ত আগলে ঠিকই ফিফটি তুলে নেন টাইগার ওপেনার লিটন দাস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই করেছিলেন লিটন। প্রথম ওভারেই হ্যাটট্রিক বাউন্ডারিতে রানের খাতা খুলেন এই ওপেনার। তবে পুরোপুরি ব্যর্থ আরেক ওপেনার তানজিদ তামিম। তরুণ এই ওপেনার কিছুতেই যেন ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারছেন না। দ্বিতীয় ওভারে রিস টপলির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন। পরের বলেই ফিরেছেন তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। শান্ত গোল্ডেন ডাক খেয়ে সাজঘরে ফেরায় ১৪ রান তুলতেই ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর উকেটে এসেছিলেন সাকিব। লম্বা পথ পাড়ি দিতে সাকিবের কাঁধে অনেক দায়িত্ব ছিল। তবে ধর্মশালায় ব্যর্থ হলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলটি ব্যাক অফ ল্যান্থ ডেলিভারী ছিল টপলির। সেখানে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন সাকিব। ১ রান করে সাকিব ফেরায় ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ।
টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে পারলেন না মেহেদি হাসান মিরাজও। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। আজ ব্যাটিংয়ে আসেন পাঁচ নম্বরে। যেখানে বড় ইনিংস প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পারলেন না মিরাজ। নবম ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭ বলে ৮ রান।
বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মধ্যেও এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলেন লিটন। হ্যাটট্রিক বাউন্ডারিতে ইনিংস শুরু করা লিটন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ৩৮ বলে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন।
৫০ রানের আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন লিটন-মুশফিক। বড় রানের পথেই এগোচ্ছিলেন লিটন। দলকেও টেনে তুলছিলেন। তবে এই ওপেনারকে থামতে হল ৭৬ রানে। ২১তম ওভারের শেষ বলে ওকসের স্লোয়ার কাটারে ব্যাট চালিয়ে বোকা বনেছেন লিটন। আউটসাইড এডজে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন এই ওপেনার।
লিটনের পর ফিফটি পান মুশফিকুর রহিম। ক্যারিয়ারের ৪৭তম ফিফটিটি পেতে তার লেগেছে ৬১ বল। তবে এই মাইলফলক স্পর্শ করে আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। টপলির শর্ট বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ডম্যানে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৬৪ বলে ৫১ রান।
লিটন-মুশফিক ফেরার পর মাহেদীকে নিয়ে বড় হার ঠেকানোর চেষ্টা চালান হৃদয়। তবে তিনিও পারেননি দলীয় ১৮৯ রানে লিভিংস্টোনকে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি। হৃদয় আউট হওয়ার পর রশীদের গুগলিতে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ফেরত যান মাহেদী। বাংলাদেশ তখনও ২০০ এর আগে অলআউট হওয়ার শঙ্কায়। তবে এরপর শরীফুলের সাথে মিলে তাসকিন দলীয় রান ২০০ পার করান। ২২১ রানে মার্ক উডের বলে শরীফুল আউট হওয়ার আর ৬ রান পর শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তাসকিন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে এসে শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হয় ইংলিশ দুই ওপেনার মালান এবং বেয়ারস্টো। এই দুইজনের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ১১৫ রান। এরপরে বেয়ারস্টো আউট হলেও দমে যায়নি ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। রুটকে নিয়ে বড় এক জুটি গড়েন মালান।
শরিফুল, সাকিব, মুস্তাফিজদের তুলোধুনো করে মালান তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ শতক তুলে নেন। এরপরও এগিয়ে যাচ্ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। তবে শেষ পর্যন্ত শেখ মেহেদীর বলে বোল্ড হয়ে ১৪০ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মালান। মালান, বেয়ারস্টো ছাড়াও ফিফটির দেখা পেয়েছেন জো রুট। ৬৮ বলে ৮ চার এবং এক ছক্কার মারে ৮২ রান করেছেন রুট।
এরপর অবশ্য ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটার ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শরিফুল ও শেখ মেহেদীর বলে একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ব্রুক, লিভিংস্টোন এবং কারান। শেষ পর্যন্ত আদিল রশিদ এবং ক্রিস ওকসের ঝোড়ো ইনিংসের ওপর ভর করে ৩৬৪ রানের বিশাল সংগ্রহ পায় ইংল্যান্ড।
ম্যাচে অনবদ্য ১৪০ রানের জন্য ম্যাচ সেরা হয়েছেন ডেভিড মালান।