নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে পালানো দুই জঙ্গির মধ্যে একজন অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম(সিটিটিসি) প্রধান মো.আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ পাঁচ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। তাদের মাধ্যমই জানা যায়, মাত্র দুইদিন আগেই ওই বাসা থেকে পলাতক এক জঙ্গি তার অবস্থান পরিবর্তন করেন। সে প্রায় এক মাস ওই বাসাতেই অবস্থান করছিলেন।
রবিবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান এসব তথ্য জানান।
গত বছরের ২০ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত প্রঙ্গন থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগীরা। এক পুলিশ সদস্যের চোখে-মুখে স্প্রে করে জঙ্গি সদস্য মইনুল হাসান শামিম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে ফিল্মি কায়দায় ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায় তারা। সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়সহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে শনিবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির ও তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করে সিটিটিসি। তারা হলেন- আনসার আল ইসলামের নায়েবে আমির সাখাওয়াতুল কবির ওরফে আনিস ওরফে রফিক, সংগঠনের আশকারী বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডার ইহসানূর রহমান ওরফে মুরাদ ওরফে সাইফ, বখতিয়ার রহমান ওরফে নাজমুল, ইউসুফ আলী সরকার ও জাহেদুল ইসলাম ওরফে আশ্রাফ।

সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমান সময়ে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে আনসার আল ইসলামই কিছুটা সক্রিয়। সংগঠনটি ঘিরে সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা মনে করি সংগঠনের আমিরসহ নেতৃত্বপর্যায়ের ৫ জনকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আমরা তা অনেকটাই নিউট্রাল করতে পেরেছি।
গ্রেফতারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে, রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি জানান, আদালত থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গির বিষয়ে গ্রেফতারকৃত পাঁচজনের কাছ থেকে আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। আরও দুই-এক জনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও কিছু তথ্য মিলেছে।
জঙ্গিদের প্রশিক্ষন এবং অস্ত্র সরবরাহ করে আসা কুকি চিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কুকি চিনের সহায়তায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রধান শামিন মাহফুজকে আগে আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মাহফুজ জেলখানায় বসে যখন নতুন সংগঠনের পরিকল্পনা করে তখন সমমনা আরও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য জেলে ছিল। মতাদর্শ ও পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে তারা একত্রিত হয়ে নতুন নামে কার্যক্রম শুরু করে। এজন্যই পরে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে শামিন মাহফুজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, শারক্বিয়ার ৯৫ ভাগেরও বেশি সদস্যদের গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নেতৃত্ব পর্যায়েও যারা ছিল তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা মনে করি শামিন মাহফুজকে গ্রেফতারের মাধ্যমে শারক্বিয়ার যবনিকা টানতে পেরেছি আমরা। কুকি চিন ও তাদের নেতৃত্বপর্যায়ের সদস্যদের অবস্থান শনাক্তের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামে একটি সংগঠন শারক্বিয়ার মতো পাহাড়ি অঞ্চলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সংগঠিত হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। আমরা এমন সংগঠন অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিতে সক্ষম হচ্ছি।’
নির্বাচন সামনে রেখে এ ধরনের জঙ্গি সংগঠনের কোন নাশকতার পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তবে এটা ঠিক জঙ্গি সংগঠনগুলো নির্বাচন বা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশ পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে চায়। যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্যান্য কাজে মনোযোগ দেয় তখন তারা সদস্য সংগ্রহসহ সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এখন আগের মতো পরিস্থিতি নেই, আগে সিটিটিসির মতো সুসংগঠিত ইউনিট ছিলো না যারা শুধু জঙ্গিদের নিয়েই কাজ করবে। আমরা তৎপর আছি।