নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে সত্যিকার অর্থে মেধাপাচার রোধ করা দুরূহ ব্যাপার। জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি আরো বলেন, স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল সব দেশ থেকেই মেধাপাচার হয়ে থাকে। তার পরও সরকারের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও নানাবিধ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের মেধাপাচার নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে এসংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান।
লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগের কারণে মেধাবীরা দেশে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। এ ছাড়া সব সেক্টরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফলে বাংলাদেশের মেধাপাচার অনেকটাই রোধ হচ্ছে। স্ব স্ব ক্ষেত্রে মেধাবীদের মূল্যায়নে সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে।
শেখ হাসিনা বলেন, সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ, মেধাবীদের বৃত্তি বা উপবৃত্তি প্রদান, সব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধার প্রাধান্য, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি, রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশিষ্ট ও মেধাবীদের বিভিন্ন পদক-পুরস্কার ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার থেকে মেধাবীদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের দ্রুত বিকশিত ও আধুনিকায়নভিত্তিক উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে মেধাপাচার রোধ গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেধাবী, দক্ষ ও উদ্ভাবনী প্রতিভা সাধারণত কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামোগত পরিবেশের অভাবে ভিন দেশে স্থানান্তরিত হয়। ফলে দেশের অগ্রগতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান, পরিবেশ, বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা, লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ, নাগরিকত্বসহ স্থায়ী বসবাসের সুযোগ হলো মেধাপাচারের অন্যতম কারণ। সরকার এ বিষয়ে সচেতন এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মেধাপাচার রোধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে গবেষণা পরিচালনা করে বঙ্গোপসাগরে ৪৭৩টি প্রজাতির মাছ শনাক্ত করা হয়েছে। ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশের সাগর উপকূলে এ পর্যন্ত ১৫৪ প্রজাতির সিউইড শনাক্ত করেছে, যার ২৭টি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার মাধ্যমে ছয় প্রজাতির সিউইডের চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
একই দলের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও দায়িত্বশীল শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। বর্তমানের বিশ্বে ১৭৬টি দেশে এক কোটি ৪৯ লাখের বেশি কর্মী কর্মরত আছেন।বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিগত এক যুগে পেশাজীবী, দক্ষ, আধা দক্ষ ও স্বল্প দক্ষ ক্যাটাগরিতে ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২ জনের বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন ও ওরিয়েন্টেশন কার্যক্রম জেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ ও বিকেন্দ্রীকরণের ফলে বিগত এক যুগে প্রায় ১০ লাখ নারী কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর জন্য অ্যাকোয়ান্টিক ডপলার কারেন্ট প্রফাইলার (এডিসিপি) যন্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অ্যাকোয়ান্টিক ডপলার কারেন্ট প্রফাইলার (এডিসিপি) যন্ত্র সংগ্রহ করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম সংলগ্ন সমুদ্র এলাকার স্রোত ও ঢেউ নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম ম্যাপিং করা হচ্ছে। ব্লু ইকোনমির অপার সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সামুদ্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ২০১৮ সাল থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার সামুদ্রিক পরিবেশ তথা ওয়াটার কোয়ালিটি, সেডিমেন্ট প্রবাহ, পানির তাপমাত্রা, চাপ, লবণাক্ততা, নিউট্রিয়েন্ট, ক্লোরোফিল, ডিজলভ অক্সিজেন, সিওডি, বিওডি, টার্নিডিটি, এসিডিফিকেশন ইত্যাদি ডাটা নিয়মিত সংগ্রহ করছে। ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে কুতুবদিয়া পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় সমুদ্র এলাকার ব্লু কার্বন পরিমাপ এবং নাফ মোহনা, রেজু খাল মোহনা ও মহেশখালী চ্যানেলের মোহনা অঞ্চলের ম্যানগ্রোভ এলাকায় ব্লু কার্বন স্টক পরিমাপ করেছে। এ ছাড়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট সমুদ্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য ২০১৮ সাল থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে শুরু করে ফেনী পর্যন্ত উপকূল এলাকা এবং সুন্দরবন এলাকার সমুদ্রের মাইক্রোপ্লাস্টিক স্ট্যাডি করেছে এবং এসংক্রান্ত মানচিত্র তৈরি করছে।
একই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে পূর্ব ও পশ্চিম জোনের কোস্টাল ও নিয়ারসোর এলাকার সব ফিজিক্যাল প্যারামিটার (যেমন : ওয়েভ ডাটা, টাইড ডাটা, কারেন্ট ডাটাসহ অন্যান্য তাপমাত্রা, চাপ, লবণাক্ততা, গভীরতা ইত্যাদি) নির্ণয় গবেষণা কার্যক্রম চলছে এবং ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়াও নৌবাহিনী দেশের সমুদ্র সীমানায় বিদেশি ট্রলার/জাহাজের অবৈধ প্রবেশ রোধ, মাছ ধরা বন্ধ করা, চোরাচালান ও মানবপাচার রোধে কাজ করে চলেছে।
বা বু ম / অ জি