সোহেল রানা, ঢাকা :
স্বামী শারীরিক অক্ষম সেই সুযোগে স্ত্রী ইতি বেগম ওরফে রানী (৩৫) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানার সাদাপুর পুরানবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মোঃ আব্বাস আলীর (৫০) সঙ্গে। দীর্ঘদিনের এই প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে গিয়ে বাধা দেয় স্বামী নুর ইসলাম বেপারী (৫৫)। পরকীয়ার বিষয়টি তার মাধ্যমে জেনে যায় এলাকাবাসী।
পরকীয়ার এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে প্রেমিক আব্বাস ও ইতি রানী নুর ইসলাম বেপারীকে
হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুসারে বিভিন্ন কৌশলে স্বামীকে হত্যা করেন ইতি বেগম ওরফে রানী ও পরকীয়া প্রেমিক মোঃ আব্বাস।
হত্যার পর নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী ইতি বেগম ওরফে রানী এলাকাবাসীকে জানায় তার স্বামী নুর ইসলাম বেপারীরকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টের পর ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের পাশাপাশি হত্যার রহস্য উন্মোচনে তদন্ত শুরু করে।
স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিকের পরিকল্পনায় গত ২৬ জুন রাত ৯ টায় সাভার মডেল থানাধীন সাধাপুর ভাংগা ব্রীজের পাশে আক্কাস আলীর বাউন্ডারী করা বাড়ীর সামনে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
সোমবার (৩ জুলাই) দুপুরে সাভার মডেল থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম এই তথ্য জানান।
পুলিশ জানায়, টাঙ্গাইল জেলার শিবপুর ইউনিয়নের কান্দিলা গ্রামের মৃত আজমত আলী মিয়ার মেয়ে ও সাভারের হেমায়েতপুরের সেন্ট্রাল হাসপাতালের আয়া ইতি বেগম ওরফে রানীর সঙ্গে ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানার সাদাপুর পুরানবাড়ী এলাকার মৃত রহমত আলীর ছেলে মোঃ আব্বাস আলীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের জন্য দীর্ঘদিন যাবত স্বামী ঢাকা জেলার ধামরাই থানার সুয়াপুর কুঠিরচর এলাকার নেহাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে ও সাধাপুর ভাঙ্গা ব্রীজ এলাকার আক্কাস আলীর বাড়ীর কেয়ারটেকার নুর ইসলাম বেপারীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অনৈতিক সম্পর্ক করে আসছিল। পরকীয়ার বিষয়টি নিহত নুর ইসলাম জেনে যায় এবং বাধা দেয়। এসব বিষয়ে কলহ সৃষ্টি হলে এলাকাবাসীও অবগত হয়। এই ক্ষোভে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬ জুন রাত ৯ টার দিকে স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিক মিলে স্বামী নুর ইসলাম বেপারীকে একা পেয়ে প্রথমে তালা দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং পরবর্তীতে একে অপরের সহযোগিতায় নিহতের দেহ টেনে হিচড়ে ঘরের ভিতর নিয়ে মেঝেতে শোয়াইয়া ঘরে থাকা বটি দিয়ে মাথা ও মুখমন্ডলে এলোপাথারি আঘাত করে এবং গলা কেটে আলাদা করে নুর ইসলামের মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঘটনার পরদিন ২৭ জুন নিহত নূর ইসলাম ও তার প্রথম স্ত্রী শরীফুন দম্পতির বড় ছেলে আলিম বেপারী (৩০) অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা (নং-৯০) দায়ের করে। ভবানীপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ মোখলেছুর রহমানের কৌশলে হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে পুলিশের পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার হয় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী প্রেমিক মোঃ আব্বাস আলী ও হত্যাকারি স্ত্রী ইতি বেগম ওরফে রানী। তারা উভয়েই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা পিপিএম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ মোখলেছুর রহমান সহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এমন নৃশংস হত্যার ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে নিহতের পরিবারে। পরিবারের দাবি এমন ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত হত্যাকারীদের।
বা বু ম/ সুমন রায়