নিজস্ব প্রতিবেদক
রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের মধ্যে বিরোধের জেরে গণ অধিকার পরিষদে একদিকে বহিষ্কার অন্যদিকে অনাস্থা প্রস্তাব, এ ধরনের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ চলছে।
গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদে রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁকে চিঠি পাঠিয়েছেন নুরুল হকের সমর্থকেরা। এর আগে ২০ জুন দলের সদস্যসচিবের পদ থেকে নুরুল হককে বহিষ্কার করেন রেজা কিবরিয়া।
গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ দুই নেতার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ–পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে দলটিতে অস্থিরতা চলছে অনেক দিন ধরে। বিভিন্ন সময় তাঁরা প্রকাশ্যেও বিরোধে জড়িয়েছেন।
সম্প্রতি দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া এবং সদস্যসচিব নুরুল হক একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। রেজা কিবরিয়া দলের সদস্যসচিব নুরুল হকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেশী দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ করেন। এ ছাড়া রেজা কিবরিয়া দলের তহবিল নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্ন তোলেন।
অন্যদিকে নুরুল হক পাল্টা অভিযোগ করেন যে তাঁদের দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া অনেক দিন ধরে ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের নেতৃত্বাধীন ইনসাফ কায়েম কমিটির কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। সে জন্য তিনি অর্থ পাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন নুরুল হক।
শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের অন্য নেতারা আলোচনায় বসেছিলেন ১৮ জুন, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। সেই বৈঠকের পরদিন রেজা কিবরিয়া বিদেশে যান। তাঁর অনুপস্থিতিতে নুরুল হকের সমর্থকেরা ১৯ জুন বৈঠক করে দলের এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করেন। সেই খবর প্রকাশের পর বিদেশে থেকেই রেজা কিবরিয়া দলের সদস্যসচিবের পদ থেকে নুরুল হক এবং রাশেদ খানকে বহিষ্কারের কথা বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান।
এখন আবার রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়কের পদ থেকে কেন বহিষ্কার করা হবে না—সেই ব্যাখ্যা চেয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠি তাঁকে পাঠিয়েছে অন্য পক্ষ।
গণ অধিকার পরিষদ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ রোববার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের স্বাক্ষর সংযুক্ত করে অনাস্থা প্রস্তাব রেজা কিবরিয়া বরাবর পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির এক-তৃতীয়াংশ সদস্য সম্মত হলে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা আনা যাবে। রেজা কিবরিয়ার ইনসাফ কায়েম কমিটির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়াসহ সাম্প্রতিক যে বিষয়গুলো গণমাধ্যমে এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
গণ অধিকার পরিষদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের প্রতি অনাস্থা উত্থাপন করতে হলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের স্বাক্ষরিত লিখিত প্রস্তাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সব সদস্যের কাছে পাঠাতে হবে। প্রস্তাব পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে সভাপতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি সভা আহ্বান করবেন। সভাপতি এ সভা আহ্বান না করলে তলবি সভা ডেকে এ প্রস্তাবের নিষ্পত্তি করতে হবে। ওই সভায় মোট সদস্যসংখ্যার দুই–তৃতীয়াংশের ভোট পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস হবে।
আজ গণ অধিকার পরিষদের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান কমিটির সদস্যদের পক্ষে রেজা কিবরিয়াকে চিঠি পাঠান। তাতে বলা হয়, ‘আমরা গণ অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পেরেছি যে আপনি গণ অধিকার পরিষদের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও ২১ দফা কর্মসূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন, যা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ ছাড়া আপনাকে গণ অধিকার পরিষদের নিয়মিত কর্মকাণ্ডেও পাওয়া যাচ্ছে না।’
চিঠিতে বলা হয়, ‘অনাস্থা প্রস্তাব পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সভা করে কেন উল্লেখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আপনাকে কেন আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারণ করা হবে না, এ মর্মে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। অন্যথায় গণ অধিকার পরিষদের গঠনতন্ত্রের ধারা ৩৯(ঘ)-এর ক্ষমতাবলে তলবি সভা ডেকে আপনার বিষয়ে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে আপনাকে অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হকের মধ্যকার দ্বন্দ্বে দলটিতে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। এখন এক পক্ষের এই অনাস্থা প্রস্তাবের চিঠির ব্যাপারে রেজা কিবরিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বা বু ম / অ জি