1. boyd94289@gmail.com : Ayon Islam : Ayon Islam
  2. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  3. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  4. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
  5. bangladeshbulleting646@gmail.com : Sohel Desk : Sohel Desk
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন

সিলেটে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, তবু কিছুটা অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ

  • সময় : রবিবার, ১৮ জুন, ২০২৩
  • ১৮০

সিলেট সংবাদদাতা

সিলেট সিটির নির্বাচন কার্যত প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন হয়ে পড়েছে। বিএনপি নির্বাচনে নেই। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীও এখন সরে দাঁড়িয়েছেন। একদিকে ফাঁকা মাঠ, অন্যদিকে সরকারি মহলের সব রকমের সহানুভূতি রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে। এরপরও ভোট নিয়ে পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই ক্ষমতাসীন দল।

অস্বস্তির পেছনের কারণ হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুজন নেতা দুটি বিষয়কে ইঙ্গিত করেছেন। প্রথমত, মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত প্রভাবশালী কিছু নেতাকে ঘিরে তাঁদের মধ্যে ‘সন্দেহ-অবিশ্বাস’ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী ভোট একজোট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

ভোটের মাঠে নানা মেরুকরণের শঙ্কা থেকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দিনরাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গত বুধবার বৃষ্টির কারণে যেখানে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম (বাবুল) প্রচার-প্রচারণা সীমিত করেন, সেখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একাধিক কর্মসূচিতে অংশ নেন।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিপক্ষ কে কিংবা কোন দলের, এটা বিষয় নয়। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকেই হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। সবাই গুরুত্বপূর্ণ। এটা মাথায় রেখেই আমরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি।’

সিলেটে ভোট হবে ২১ জুন। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়াও জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন, মো. শাহ্ জামান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। এ ছাড়া বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় দলটি সিলেট ও রাজশাহী সিটির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। দলের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিলেটে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান গত সোমবার রাতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না থাকায় এখন সিলেটে একেবারে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও নিরুত্তাপ নির্বাচন হবে।

‘সন্দেহ-অবিশ্বাস’ সঙ্গী করে চলছে প্রচারণা

বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বিএনপিদলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে হেরে যান। গত নির্বাচনে বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের পরাজয়ে নেতাদের ‘অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা’ই প্রধানত দায়ী বলে দলটির বড় একটি অংশ মনে করে। এবারও একই শঙ্কায় আছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা।

 স্থানীয় নেতাদের পাশ কাটিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয় নেতাদের অনেকে ক্ষুব্ধ হন। তবে সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে স্থানীয় নেতাদের কেউ প্রকাশ্যে প্রার্থীর বিরোধিতা করছেন না।

মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি, তাঁদের অনেকেই অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন। এমনই একজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন (সিরাজ) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। কিন্তু নেত্রী যাঁকে (আনোয়ারুজ্জামান) মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁর পক্ষে এখন দিনরাত প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি। এখানে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বের সুযোগ নেই।’

এরপরও প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষের নেতা-কর্মীদের শঙ্কা কাটছে না। তাঁদের অনেকে মনে করেন, স্থানীয় ১০ জন নেতা মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। তাঁদের কেউ কেউ আনোয়ারুজ্জামানের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি মন থেকে এখনো মেনে নিতে পারেননি। ফলে তাঁদের কেউ কেউ বিপক্ষে কাজ করতে পারেন। এ সন্দেহ-অবিশ্বাসের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের তিন নেতা অভিযোগ করেন, দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় নিয়মিত উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা দিলেও তাঁরা পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে নামেননি। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে এসব নেতার মধ্যে আন্তরিকতা ও স্বতঃস্ফূর্ততায় ঘাটতি আছে।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের যাঁরা সিলেটে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন, তাঁদেরও কেউ কেউ সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিয়ে কথা বলছেন। এমনকি তাঁরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, দলের প্রার্থীর পরাজয় হলে ‘ছদ্মবেশীদের’ চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে আওয়ামী লীগে কোনো বিভেদ কিংবা নেতাদের ভেতরে সন্দেহ-অবিশ্বাস নেই বলে দাবি করেছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দলের নেতাদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি নেই। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতেই কেন্দ্রীয় নেতারা সতর্কতামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। কোনো শঙ্কা থেকে নয়।

আলোচনায় ‘সরকারবিরোধী ভোট’

নির্বাচন বর্জন করে দল থেকে বহিষ্কারের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরও বিএনপির ৪২ জন ও জামায়াতের ২০ জন নেতা-কর্মী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। কাউন্সিলর পদে ভোট দিতে বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা যদি কেন্দ্রে যান, সে ক্ষেত্রে মেয়র পদে তাঁরা কাকে ভোট দেবেন,Ñএটি এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ভোটের হিসাব-নিকাশে সরকারবিরোধী ‘ভোটব্যাংকের’ দিকে নজর রাখছেন মেয়র প্রার্থীরা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিপরীতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম (বাবুল) আওয়ামী লীগ বা সরকারবিরোধী ভোট টানতে পারেন, সাধারণভাবে এমন ধারণা করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। তবে বিএনপি ও জামায়াতের কয়েকজন নেতা বলছেন, তাঁদের দল নির্বাচন বর্জন করায় কর্মী-সমর্থকেরা ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন না।

মূলত কাউন্সিলর প্রার্থীদের আত্মীয়স্বজন ভোট দিতে যাবেন। এই প্রার্থীদের অনেকে আবার স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত। এ বিবেচনায় তাঁদের ভোটাররা জাতীয় পার্টির চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই বেশি গুরুত্ব দেবেন।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, দলীয় ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে বিএনপি তৎপর। আর আওয়ামী লীগ চিন্তা করছে, বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বা ভোটার বেশি আছে, এমন ওয়ার্ডে কীভাবে ভোটার উপস্থিতি কমানো যায়।

অপর দিকে সরকারবিরোধী ভোট আছে, এমন ওয়ার্ডে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে করণীয় ঠিক করছে জাতীয় পার্টি। তবে জামায়াতের একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীও তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের কিছু ভোট পাবেন। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিএনপির ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এ ভোট নিয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র কোনো আগ্রহ নেই।’

বিএনপি-জামায়াতের ভোটব্যাংক শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যাবে কিংবা তাঁরা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসবেন কি না, সেটা স্পষ্ট হতে ভোট পর্যন্তই অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকেরা।

বা বু ম / অ জি

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪