নাটোর সংবাদদাতা
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার একটি কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো পার্সেলের ভেতর থাকা শক্তিশালী বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের বোমা ডিসপোজাল দলের পরিদর্শক শফিউদ্দিন শেখের নেতৃত্বে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়।
এ নিয়ে গতকাল দিনভর ভয়, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় সময় পার হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মচারী ও স্থানীয় মানুষের। বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার ফলে তাঁদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার পর রাতেই শফিউদ্দিন শেখ সাংবাদিকদের বলেন, অধ্যক্ষের নামে আসা পার্সেলের ভেতর থাকা বোমাটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ছিল। বোমাটি বিস্ফোরিত হলে কলেজটি উড়ে যাওয়ার, আশপাশের বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ও প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। তবে তাঁরা ঠিকঠাকভাবে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করতে পেরেছেন।
বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার (গুরুদাসপুর-সিংড়া সার্কেল) আকতারুজ্জামান, গুরুদাসপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান শাকিল ও গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ারুজ্জামান।
এর আগে গতকাল রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে শফিউদ্দিন শেখের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি দল প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ সাদা রঙের মাইক্রোবাস নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কলেজ মাঠেই গর্ত খুঁড়ে ভেজা বালুর সাতটি বস্তা চাপা দিয়ে দূরনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সাহায্যে বোমাটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। এ সময় বিকট শব্দে আশপাশের এলাকা কম্পিত হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার আকতারুজ্জামান বলেন, বোমাটি নিষ্ক্রিয় করার পর আলামতগুলো সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যাবে কী জাতীয় বোমা সেখানে রাখা হয়েছিল।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের দল। পাশাপাশি অধ্যক্ষের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
গুরুদাসপুর থানা-পুলিশ, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও র্যাব সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুর পৌর শহরের সরকারি বঙ্গবন্ধু টেকনিক্যাল বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কার্যালয়ের দরজা ঘেঁষে কে বা কারা প্লাস্টিকের বস্তায় মোড়ানো একটি প্লাস্টিকের ঝুড়ি রেখে যান। ঝুড়ির ওপরে লেখা, ‘আম্রপালি ৩০ কেজি, প্রাপক, প্রিন্সিপাল, বঙ্গবন্ধু কলেজ, গুরুদাসপুর, নাটোর।’ এ লেখার নিচে একটি মুঠোফোন নম্বরও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজে আসেন তিনি। দরজা ঘেঁষে কার্টনে বিশেষ বার্তা লেখা থাকায় সন্দেহ হয় তাঁর। অন্য শিক্ষকদের সহায়তায় থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।
কলেজটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি পক্ষের মামলা-মোকদ্দমা চলছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিরোধের জেরে সম্প্রতি প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে ও কলেজটি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। এই বিরোধ থেকে প্রতিপক্ষ তাঁর অফিস কক্ষের সামনে বোমা পেতে রাখতে পারে।
বা বু ম / অ জি