চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মীর হেলালের বিরুদ্ধে হাটহাজারী শ্রী শ্রী পুন্ডরীক ধামে সাধু সন্ন্যাসীদের মামলা দায়েরের মাধ্যমে হয়রানি এবং ভুয়া দলিল তৈরি করে জমি দখলের অপতৎপরতা চালানোর অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)।
রোববার (১৮ জুন) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী।
এ সময় তিনি সাধু-সন্ন্যাসী বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে ধর্মীয় স্থাপনা দখলের চক্রান্ত বন্ধ করে ৭ দফা দাবি জানান। এছাড়া মন্দিরের জায়গা দখলের চেষ্টা এবং ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের হিন্দুদের নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দেয় ইসকন। একই সঙ্গে হিন্দুদের পবিত্র ভূমি রক্ষায় ১৫৭ দেশে একযোগে আন্দোলন করারও হুমকি দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী জানান, হাটহাজারীর মেখল এলাকায় পুন্ডরীক ধামের পাশে লক্ষ্মী-জনার্দন সরোবর আর এস খতিয়ান অনুযায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড করা আছে। যা চিরস্থায়ী দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবেও সরকারিভাবে চিহ্নিত। শতবছর ধরে এখানকার এলাকাবাসী ও সাধু-সন্ন্যাসীরা এই স্থানকে পুন্ডরীক ধামের সম্পত্তি হিসেবেই জানে। এই এস্টেট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে পুন্ডরীক ধাম নামে পরিচিত। হর কুমার স্মৃতি তীর্থ আমৃত্যু উক্ত বিগ্রহের সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করেন। এই স্থানটি ঐতিহাসিকভাবে ভগবান শ্রী চৈতন্য দেবের প্রধান পার্ষদদের অপ্রাকৃত লীলা ভূমি।
‘মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অনবদ্য অবদান চৈতন্য ভাগবত, চৈতন্যচরিতামৃত, চৈতন্যমঙ্গল, গৌর-পার্ষদ চরিতাবলি, গৌড়ীয় বৈষ্ণব অভিধান প্রামাণিক গ্রন্থে এই স্থানের মহিমা বর্ণিত হয়েছে। কলিকালে রাধারানীর পিতৃভূমিরূপে ধর্মীয়ভাবে প্রসিদ্ধ এবং ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত, যা ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯২৯ সালে সংস্কার দ্বারা সংরক্ষণ করেন। শ্রী চৈতন্য চরিতামৃত, গীতা, ভাগবত প্রচারের অনবদ্য সংগঠন চৈতন্য কালচারাল সোসাইটি বা ইসকন ধর্মীয়ভাবে তীর্থস্থান হিসাবে পরিগণিত অত্র ভূমির পবিত্রতা ও ঐহিত্য সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে উক্ত পুন্ডরীক ধামের ঐহিত্য লালন করে আসছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও তার ছেলে মীর হেলাল সম্প্রতি এইসব সম্পত্তি ভুল ঠিকানা ব্যবহার করে, ভুয়া দলিলের মাধ্যমে দখল নেওয়ার চেষ্টা চালান। এই বিষয়ে এলাকাবাসী ও সাধু সন্ন্যাসীরা বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে। সাধু সন্ন্যাসীদের হয়রানি করার জন্যই এই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। পুন্ডরীক ধাম এলাকায় সকল ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এছাড়া ধামের মানুষজনের সঙ্গে এলাকার ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজনের সাথে ঐতিহাসিককাল থেকে সুসম্পর্ক। কিন্তু মীর নাছির ও তার ছেলে মীর হেলাল ধামের জায়গা জবরদখল করে এবং পথরুদ্ধ করে এলাকায় অরাজকতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চান। তারা কথায় কথায় সন্ত্রাসী ও এলাকার কথিপয় গুন্ডাবাহিনীর হুমকি দিচ্ছে। যার কারণে সম্প্রীতির হাটহাজারীতে অশান্তির বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, মীর নাছির ও মীর হেলালের বাড়ি হাটহাজারীর মিরের খীল এবং যারা বিভিন্নভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কথিত দলিল সৃজন করেছে তারাও কেউ মেখলের বাসিন্দা নয়। হিন্দু তীর্থক্ষেত্র পুন্ডরীক ধামের জায়গা জমির ওপর দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই বিএনপি নেতার লুলুপ কেন দৃষ্টি পড়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়া সাধু সন্ন্যাসীদের চরিত্র হনন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাক করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করণসহ বিবিধ অপতৎপরতার মাধ্যমে শ্রীধামের ক্ষতি সাধনে তৎপর রয়েছে মীর নাছির ও মীর হেলাল।
সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ইসকন নেতৃবৃন্দ।
এতে উপস্থিত ছিলেন শ্রী শ্রী কৈবল্য ধামের মোহন্ত মহারাজ শ্রীমৎ কালীপদ ভট্টাচার্য্য, পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, নীলু নাগ, বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার ও চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু।
বা বু ম / অ জি