সামছুল আলম সাদ্দামঃ
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রচণ্ড রাজনৈতিক চাপে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতা দণ্ডিত হয়েছেন। তাদের কারো কারো ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কারো রায় আপিলে আটকে আছে। কেউ কেউ আজীবন দণ্ড নিয়ে কারাগারে। এরপরও দলটির রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড থেমে নেই। এর মধ্যে গত ১০ জুন জামায়াত প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি পায়। দীর্ঘ ১০ বছর পর সমাবেশের অনুমতি দেয়ায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে রাজনীতিতে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যেহেতু জামায়াত নিবন্ধন হারানো দল, আর বাংলাদেশের সংবিধানে নিবন্ধন না থাকলেও সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা রয়েছে। ফলে তাদের সমাবেশের অনুমতি দিয়ে সরকার দেশ-বিদেশে একটি বার্তা দিয়েছে, দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ করার পরিবেশ রয়েছে। রাজনৈতিক অনেক বিশ্লেষকের অভিমত, মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর সৃষ্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণেই জামায়াতকে প্রকাশ্যে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার বিকল্প নেই।
গত ১০ জুনের সমাবেশে জামায়াতের দম্ভ ও মিথ্যাচার প্রকাশ পেয়েছে, যা অশনিসংকেত। জামায়াত বদলায়নি। এতদিন তারা ভেতরে ভেতরে কার্যক্রম চালালেও প্রকাশ্যে সমাবেশের পর আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। নিবন্ধন হারানো দলটি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নানা কৌশলে মাঠে নেমেছে। জামায়াত মনে করছে, তাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজন আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই বিপুলসংখ্যক প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।
এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন বিবেচনা করে তারা ভোটকেন্দ্রে কঠোর হবেন। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নানা কৌশলে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটি। ভেতরে ভেতরে গোছানোর কাজ তারা করছেন অতি বিচক্ষণতার সঙ্গে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ২৮ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এত কিছুর পরও জামায়াত আছে।
জামায়াত আছে, কারণ তাদের পেছনে বিএনপি আছে। দলের নিবন্ধন বাতিল হলেও তারা আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠছে। সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের পথে হাঁটা বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলনে নিজেদের সক্রিয় করতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী দলটি। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ, চাঁদা আদায়, ঝটিকা মিছিল থেকে শুরু করে নানা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন এ দলটির নেতাকর্মীরা।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে এলাকায় এলাকায় তারা করছেন গোপন বৈঠক। আলোচনায় জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন বসতবাড়ি, কোচিং সেন্টার ও ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে তারা প্রচারের নির্ভরযোগ্য জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর সারাদেশে জামায়াতের রাজনীতিতে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তাছাড়া প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রশাসনিক বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে আগুন সন্ত্রাসের মামলায় দলটির নেতাকর্মীকে নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে। মোকাবিলা করতে হচ্ছে অসংখ্য মামলা। এরপরও তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। দলটিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। জামায়াত নিষিদ্ধ হওয়ার মামলাটি ঝুলে আছে। এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি আশা করি। দেশবাসী চান, জামায়াতকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক।
বা বু ম / এস আর