বরিশাল সংবাদদাতা
কিছুদিন আগেও বরিশালের রাজনীতিতে অচেনা ছিলেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। এই শহরের সাধারণ মানুষও আগে সেভাবে চিনত না তাঁকে। সেই বরিশালেই নৌকা প্রতীক নিয়ে আজ সোমবার জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় লড়ছেন খায়ের।
এই পরীক্ষায় তাঁর ভাই, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং ভাতিজা বরিশালের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ হতে পারতেন সবচেয়ে বড় ভরসা। কিন্তু ভাই-ভাতিজা বা তাঁদের কর্মীরা খায়েরের সঙ্গে নেই বললেই চলে। অথচ এই ভাই-ভাতিজারাই ১৪ বছর ধরে বরিশাল আওয়ামী লীগের মূল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আছেন।
এবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী খায়ের আবদুল্লাহ ভোটের প্রচারে ছিলেন ভাই-ভাতিজার বিরুদ্ধে থাকা দলীয় কর্মীদের নিয়ে। আজ ভোটের দিনও তাঁরাই পাশে থাকছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নানা চেষ্টা সত্ত্বেও দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে দল ঐক্যবদ্ধ হয়নি। ভোটের আগের দিন গতকাল রোববার খায়ের আবদুল্লাহর বক্তব্যেও সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
গতকাল দুপুরে নিজের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন নৌকার প্রার্থী খায়ের আবদুল্লাহ। সেখানে তাঁর পাশে বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহ বা তাঁদের অনুসারী নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’
খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ যারা সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী, তারা দলের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেনি। দলের এই অংশ খায়ের আবদুল্লাহর বিপক্ষে কাজ করেছে। এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, ‘যাঁদের সঙ্গে বিরোধ আছে বা তৈরি হয়েছে, তাঁদের একত্রে করে কাজ করার চেষ্টা করেছি। বাকিরা কাজ করবেন কি না, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
দলের একাংশের অসহযোগিতা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, খায়ের আবদুল্লাহ বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাঁর ভাই ও ভাতিজা চাননি তিনি বরিশালের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। যার কারণে শুরু থেকেই নির্বাচনী মাঠে ভাই-ভাতিজার অনুসারী নেতাদের অসহযোগিতা পেয়েছেন। শেষ দিকে ওই অবস্থার দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন হলেও বিশ্বাসের ঘাটতি প্রকট।
আজ সোমবার বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ। এই নির্বাচনে ১২৬টি কেন্দ্রের সব কটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে। এই সিটিতে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ আর নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। ৩০টি ওয়ার্ডের ৮৯৪টি ভোটকক্ষের প্রতিটিতে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
বরিশাল সিটির আগের চারটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুবার আর বিএনপির প্রার্থী জেতেন দুবার। এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কে হবেন, তা গতকাল শেষ সময় পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি।
তবে স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সরকারি মহলের সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও ভোট সুষ্ঠু হলে মেয়র পদে খায়ের আবদুল্লাহকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিম এখানে দলের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছেন। তিনি শুরু থেকে আলোচনায় আছেন। আবার অনেকটা নীরবে প্রচার চালালেও শেষ দিকে এসে আলোচনায় চলে আসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা কামরুল আহসান ওরফে রূপণ। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেনও সরকারবিরোধী ভোট টানতে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। খায়ের আবদুল্লাহ ছাড়া বাকি প্রার্থীদের দৃষ্টি মূলত সরকারবিরোধী ভোটারদের দিকে। সরকারবিরোধী ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, সেটা নির্ভর করছে ভোটার উপস্থিতির ওপর।
এই নির্বাচনে মেয়র পদে আরও তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন জাকের পার্টির মিজানুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান ও মো. আলী হোসেন হাওলাদার। তবে তাঁরা তেমন আলোচনায় নেই। গতকাল পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ।
বা বু ম / এস আর