ডেস্ক নিউজ:
বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক এ তিন পরিচয়েই যে ব্যক্তি পরিচিত তিনি হলেন জহির রায়হান। যেখানেই কাজ করেছেন সেখানেই পেয়েছেন তিনি সফলতা। স্বল্প জীবনে কখনো কোনো কাজে পিছপা হননি তিনি। তার পুরো নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। ডাক নাম ছিল জাফর। মানুষের কাছে জহির রায়হান নামেই খ্যাত তিনি। আজ এই গুণী মানুষটি ৮৭তম জন্মদিন।
১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এ প্রতিভাবান মানুষটি। কিন্তু তার মৃত্যুর দিনটি অজ্ঞাতই রয়ে গেছে আজও। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুর ঢাকায় তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয় মিরপুরে বিহারি এলাকায় ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলির আঘাতে তিনি মারা যান।
বাংলা চলচ্চিত্রে খুব অল্প কিছু মেধাবী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যারা এখনও আমাদের মাঝে মরে গিয়েও বেঁচে আছেন, আর তেমনই একজন জহির রায়হান। তার চলচ্চিত্রগুলো এখনো বিশাল একটা জায়গাজুড়ে আছে বাঙালির মনে। আর তার লেখা তো অমর হয়ে আছে। তার একটি কালজয়ী উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’ । পরে এই উপন্যাসটির চলচ্চিত্রায়ণ করেন তারই সহধর্মিণী অভিনেত্রী কোহিনূর আকতার সুচন্দা।তার প্রথম স্ত্রী অভিনেত্রী সুমিতা দেবী। এ প্রয়াত অভিনেত্রীর দুই ছেলে বিপুল রায়হান ও অনল রায়হান। দুজনেই নাট্যনির্মাতা। স্ত্রী সুচন্দার ছেলে তপু রায়হানও অভিনেতা।বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগত ও জীবনমুখী সাহিত্য ধারায় জহির রায়হানের অবদানের শেষ নেই। তার খ্যাতি চলচ্চিত্রের জন্য হলেও শুরুটা কথাসাহিত্যিক হিসেবে। তিনি অবশ্য অনেক কাজের সঙ্গেই জড়িত ছিলেন।তিনি চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ১৯৫৭ সালে। নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কখনো আসেনি’। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। এ ছাড়াও ‘বাহানা’, ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’ তা নির্মিত কয়েকটি আলোচিত চলচ্চিত্র। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নির্মিত ২০ মিনিট দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’ আজও ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী।
তার সাংবাদিক জীবন শুরু হয় ১৯৫০ সালে। ‘যুগের আলো’ পত্রিকায়। পরবর্তীতে তিনি খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা ইত্যাদি পত্রিকাতেও কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে ‘প্রবাহ’ নামের একটি পত্রিকায় যোগ দেন।তার প্রথম গল্প ‘সূর্যগ্রহণ’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালে। ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসটি তার অন্যতম ও জনপ্রিয় উপন্যাস। এ ছাড়া রয়েছে- শেষ বিকেলের মেয়ে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী, আর কত দিন, তৃষ্ণা ইত্যাদি।তিনি তার সাহিত্যজীবনে অনেক পুরস্কার পান। জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাস ১৯৬৪ সালে ‘আদমজী পুরস্কার’ পায়। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে বাংলা উপন্যাসে অবদানের জন্য তাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (মরণোত্তর) দেওয়া হয়।