আব্বাস আলী। ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি
সহকারী অধ্যাপক (ব্যবস্থাপনা বিভাগ)
জি, টি ডিগ্রী কলেজ, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ:
কোরবানি এটি আরবি শব্দ। যে কাজের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করা যায় তাকে কোরবানি বলা হয়।
আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন :
ﻓَﺼَﻞِّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﭐﻧْﺤَﺮْ
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি কর।’ [কাওসার,২]
আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।
কোরবানির বিষয়টি মানব ইতিহাসের মতো অতি প্রাচীন। হজরত আদম আঃএর পুত্রদ্বয় হাবিল-কাবিলের মাধ্যমে
সর্বপ্রথম কোরবানির সূচনা হয়। সে সময় কোরবানির নিয়ম ছিল অন্য রকম। ভেড়া, দুম্বা,শস্য বা গম ইত্যাদি কোরবানির জন্য আল্লাহর দরকারে পেশ করা হতো। যার কোরবানি কবুল
হতো আল্লাহর হুকুমে আকাশ হতে আগুন এসে তা ভস্মীভূত করে দিতো। আর যারটা কবুল হতো না তারটা পড়ে থাকত।
হজরত নূহ আঃ, হজরত ইয়াকুব আঃ, হজরত মূসা আঃ-এর সময়েও কোরবানির প্রচলন ছিল। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মুসলিম জাতির জনক হজরত ইব্রাহিম আঃ আল্লাহর প্রেমে প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক অবিস্মরণীয় সোনালি ইতিহাস সৃষ্টি করে গিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল বড় পরীক্ষা। আর ইসমাইল আঃ-এর পরিবর্তে একটি শ্রেষ্ঠ জবেহর পশু দান করলাম।’ (সূরা সাফফাত, আয়াত ১০২
থেকে ১০৭)।
হজরত ইব্রাহিম আঃ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কলিজার টুকরা পুত্রের গলায় যখন ছুরি চালান, তখন হজরত
জিব্রাইল আঃ আল্লাহর নির্দেশে বেহেশত থেকে একটা দুম্বা নিয়ে
রওনা হলেন। তাঁর মনে ভয় ছিল না জানি পৃথিবীতে পৌঁছার আগেই ইব্রাহিম আঃ জবেহ কাজ শেষ করে দেন! আর এ জন্যই জিব্রাইল আঃ আকাশ থেকে উচ্চস্বরে ধ্বনি দিতে থাকেন
‘আল্লাহু আকবার’।এমন মধুর ধ্বনি শুনে হজরত ইব্রাহিম আঃ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলে উঠলেন ।‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’। হজরত ইসমাইল আঃ পিতার মুখে তাওহিদের বাণী শুনতে পেয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’ হজরত জিব্রাইল আঃ এবং দুই নবীর কালামগুলো আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় হলো যে,
কিয়ামত পর্যন্ত ঈদুল আজহার দিনগুলোতে বিশ্ব মুসলিমের কণ্ঠে ওই কালামগুলো উচ্চারিত হতে থাকবে।
উট, গরু, মহিষ ৭ ভাগে এবং ৭ কমে যে কোনো সংখ্যা যেমন ২,৩,৪,৫ ও ৬ ভাগে কোরবানি করা জায়েয। (মুসলিম, হাদিস: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৭)
অংশীদারদের কেউ যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে, শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে; তাহলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে অংশীদারদেরও কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অংশীদার নির্বাচন করা জরুরি (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮, কাজিখান: ৩/৩৪৯)
কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে অংশীদার হতে পারবে। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই শুদ্ধ হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে।
শৈশবে আকিকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকিকা করা যাবে। যার আকিকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকীকারগোশত খেতে পারবে। (ইলাউস সুনান: ১৭/১২৬)
কোরবানি করতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে। হারাম টাকা দ্বারা কোরবানি করা শুদ্ধ নয় এবং এক্ষেত্রে অন্য অংশীদারদের কোরবানিও শুদ্ধ হবে না।
কোরবানির গোশত তিন দিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েজ। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২২৪, মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক : ১/৩১৮)
শরিকে কোরবানি করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েজ নয়। (আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩১৭, কাজিখান : ৩/৩৫১)
কোরবানির গোশতের এক-তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনকে এবং এক-তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয়, তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২২৪, আলমগিরি : ৫/৩০০)
কোরবানির পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েজ নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যের মতো কাজের লোকদেরও গোশত খাওয়ানো যাবে। (আহকামুল কোরআন জাসসাস : ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২২৪)