নিজস্ব প্রতিনিধি:
বিদেশি শিল্পী দিয়ে চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন নির্মাণে বাড়তি ফি নির্ধারণ করে নীতিমালা সংস্কার করায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে অকুণ্ঠ অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে দেশের শিল্পীসমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে শিল্পীরা তাদের এ অনুভূতি ব্যক্ত করে এবং ফুলেল অভিনন্দন জানায়। তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো: মকবুল হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন। অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, চলচ্চিত্র ও নাট্যনির্মাতা এবং গীতিকার এস এ হক অলীক, অভিনেত্রী ও মডেল তারিন জাহান এসময় বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শিল্পীদের সুরক্ষা দেয়া, এটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমাদের টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের একটা বিরাট অংশ অন্যদেশের শিল্পীদের দিয়ে বানানো হয় এবং সেই শিল্পীরাও প্রথম শ্রেণির নয়, অন্যদেশের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় গ্রেডের শিল্পী। পক্ষান্তরে, আমাদের মডেলশিল্পীরা দেখতেও সুন্দর, স্মার্ট এবং ভালো অভিনয় করে। বিজ্ঞাপনচিত্রেও অভিনয় করতে হয়। বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে আমাদের শিল্পীরা এত সুন্দর অভিনয় করেছে, বিষয়কে এমনভাবে ফুটিয়ে তুলেছে এবং এমনভাবে সেগুলো বানানো হয়েছে যা দেখে অভিভূত হতে হয়, মনে গভীরে দাগ কাটে। আমরা মনে করি, আমাদের দেশের শিল্পীদেরই বিদেশে গিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্র বানানোর মতো মেধা আছে।’
‘বিদেশি শিল্পী বা বিদেশ থেকে চলচ্চিত্র বা বিজ্ঞাপন বানিয়ে আনা বন্ধ করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়, এখন মুক্তবাজার অর্থনীতি, যে কেউ যে কাউকে দিয়ে বানাতে পারে, সরকারের লক্ষ্য দেশের শিল্পীদের সুরক্ষা দেয়া’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘বিদেশি শিল্পী দিয়ে চিত্র নির্মাণে আমরা প্রথমে ৫ লাখ টাকা ফি’র কথা চিন্তা করেছিলাম পরে অনেক শিল্পীর পারিশ্রমিক ৫ লাখ টাকা হয় না, সেই বিবেচনায় আপাতত শিল্পীপ্রতি ভ্যাট এবং আয়কর বাদে ২ লাখ টাকা ফি নির্ধারণ হয়েছে। আর যে টেলিভিশন সেই শিল্পীর বিজ্ঞাপনচিত্র দেখাবে সেই টেলিভিশন সরকারকে এককালীন ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। এছাড়া ১৯৯৯ সাল থেকে চালু এ সম্পর্কিত নীতিমালায় অন্যকোন পরিবর্তন নেই।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শিল্পীদের কল্যাণে অনেক কিছু করেছেন। চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছেন। সেটি এখন সংসদীয় কমিটিতে আছে। কমিটির সাথে আলোচনাও হয়েছে, খুব সহসা সেটি সংসদের অনুমোদন লাভ করবে।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম দেশ, দেশের শিল্প-সংস্কৃতি ও শিল্পী রক্ষায় এই নীতিমালা সংস্কারকে তথ্যমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সরকারের শিল্পরক্ষার উদ্যোগের সাথে একাত্ম রয়েছে। আর বিদেশি শিল্পীর জন্য ফি নির্ধারণকে দেশের শিল্পীদের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় ভাবনার ফসল বলে বর্ণনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। নাট্যনির্মাতা এবং গীতিকার এস এ হক অলীক বলেন, এ নীতিমালা সংস্কারের পাশাপাশি টিআরপি নির্ধারণ, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, বিদেশি সিরিয়াল প্রিভিউ করার বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন উদ্যোগগুলো আক্ষরিকভাবেই যুগপোযোগী। অভিনেত্রী ও মডেল তারিন জাহান তার বক্তব্যে বিদেশি চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে বাংলাদেশের শিল্পীদের কাজের ক্ষেত্র প্রসারের বিষয়ে নজর দেবার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান।
সভাশেষে সাংবাদিকরা তথ্যমন্ত্রীর নাম বিকৃত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উচ্চারণের বিষয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘ফখরুল সাহেবকে ভদ্রলোক বলেই জানতাম। তিনি কেন হঠাৎ এভাবে নাম বিকৃত করে বলা শুরু করলেন বুঝতে পারছি না। সম্ভবত তাদের রাজনীতি নিয়ে প্রচন্ড হতাশা থেকে খেই হারিয়ে ফেলছেন। আমি ফখরুল সাহেব সম্পর্কে বেশি কথা বলতে চাইনা। উনাকে অনেকেই ‘মিথ্যা ফখরুল’ বলেন, আমি সেটা বলতে চাই না। আর তিনি বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাবেন। ১২ বছর ধরে এরকম হুমকির মধ্যে থাকতে থাকতে দেখা যাচ্ছে, যারা হুমকি দিচ্ছে তাদের গন্ডিই ছোট হয়ে আসছে।’
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও চলচ্চিত্র) খাদিজা বেগম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা, অভিনেত্রী ও মডেল তানভীন সুইটি, মিষ্টি জান্নাত, সিমলা, বিপাশা কবির, নিঝুম রুবিনা, অন্তু করিম প্রমুখ সভায় অংশ নেন।