এ বছর রমজান মাসের শেষ জুমমা আজ। মুসলিম উম্মাহর জন্য এ দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাহে রমজানের বিদায়কালীন শুক্রবার তথা শেষ জুমার দিন মুসলিম বিশ্বে ‘জুমাতুল বিদা’ নামে পরিচিত। এ জুমার দিনটি রমজান মাসের শেষ জুমা হিসেবে ‘আল-কুদ্স দিবস’ পালিত হওয়ায় এর গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য অপরিসীম। সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর শেষ শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে মাহে রমজানকে বিদায় সম্ভাষণ জানান। এবারের জুমাতুল বিদায় মুসলিম উম্মাহ করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি চেয়ে আল্লাহর দরবারে আকুল আবেদন জানাবেন।
পবিত্র কোরআনে জুমার নামাজ জামাতে আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’ (সুরা আল-জুমুআ, আয়াত-৯)
জুমার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা আবশ্যক বিধায় একাকি পড়ার বিধান নেই। রমজান মাসের সর্বোত্তম দিবস হলো জুমাতুল বিদা,
যা মাহে রমজানে পরিসমাপ্তিসূচক শেষ শুক্রবারে পালিত হয়। এদিন মুমিন মুসলমানদের ইমানি সম্মিলন হয়। এদিনে এমন একটি সময় আছে যে সময় মুমিন বান্দার মোনাজাত ও ইবাদত আললাহ বিশেষভাবে কবুল করেন।
এ সময়টি হলো দ্বিতীয় খুতবার আজানের সময় থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। জুমার দিনের শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুলস্নাহ (সা.) বলেছেন, ‘সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুমাবার সর্বাধিক মর্যাদাবান ও নেতৃত্বস্থানীয় দিন। এ পুণ্য দিনে আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়। এদিন তিনি জান্নাতে প্রবেশ করেন। এদিন তিনি পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করেন। এদিন তার ইন্তেকাল হয়। এদিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ পুণ্য দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময় আললাহর দরবারে দোয়া কবুল হয়।’ (মিশকাত)
মাহে রমজানের বিদায়ী শুক্রবার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অতি মূল্যবান। এদিন সিয়াম শেষ হয়ে যাওয়ার সতর্কতামূলক দিবস। জুমাতুল বিদা স্মরণ করিয়ে দেয় যে রোজার শেষ প্রান্তে এর চেয়ে ভালো দিবস আর পাওয়া যাবে না। রোজার শুরু থেকে যেসব ইবাদত ব্যস্ততাবশত ফেলে রাখা হয়েছে, যে গুনাহখাতা মাফের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে ভুল হয়েছে, জুমাতুল বিদার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময়ে এর বরকত হাসিল করা বাঞ্ছনীয়। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলমান রমজান মাস পেল, কিন্তু সারা বছরের গুনাহখাতা মাফ করিয়ে নিতে পারল না, তার মতো হতভাগা আর নেই।
‘ পবিত্র জুমা’তুল বিদা’র মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির পেছনে তিনটি কারণ মূখ্য বলে ওলামাগণ মনে করেন। প্রথমত, এ’দিন পবিত্র রমজানুল মুবারককে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোর একটি হৃদয় কাড়া ঐতিহ্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত এ’দিন বিভিন্ন স্থান ও পরিস্থিতিভেদে সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ঘোষণা করা হয় এবং তৃতীয়ত এ’দিন মসজিদে মসজিদে আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের করণীয় ও কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াজ-নসীহত করা হয় আর এ দিবসের আমল, তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়।তাই জুমাতুল বিদা বস্তুতই ইবাদাত-বন্দেগী,তাওবা, ইস্তিগফারের,মাহে রমজানের বিদায় বেলায় আনুষ্ঠানিক আত্মোপলব্ধির ও বিশেষ মোনাজাতের।আমরা যেন পূর্ণ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে তা উদযাপন করি। মাহে রমজানের এ বিদায়ী সময়গুলো ইহতিসাব ও আত্মসমালোচনার।রমজানের সিয়াম সাধনায় বহুবিধ নিয়ম কানুন আমাদের মধ্যে কতটুকু জীবনবোধ সৃষ্টি করতে পেরেছে। মাহে রমজান আমাদের শুধু উপবাসের শিক্ষা দেয় না এটি আনে আত্মার পরিগঠন।একজন মানুষকে সঠিকভাবে নিষ্পাপ ও নির্মল জীবনের সন্ধান দেয় এ মাস।হুজুরে আকরাম (স.) ইরশাদ করেছেন এমন অনেক রোজাদার আছে যাদের রোজা নিছক ক্ষুধা পিপাসার নামান্তর।এদের ভুখা রাখা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নাই।’ রোজা অন্যান্য চরিত্র সৃষ্টির পাশাপাশি আামাদের জন্য নিয়ে এসেছে সহনশীলতার বার্তা।রোজার এক অর্থ হলো মৌনতা অবলম্বন করা। আর এ মৌনতার মাঝেই সহনশীলতা, সমাজশান্তি ও স্থিতিশীলতার বাণী নিহিত। হযরত আবু বকর (রাদিঃ) একদিন নিজের জিহ্বাকে টেনে ধরে বলেছেন এটি থেকে নিজেকে সংবরণ কর। অর্থাৎ জিহ্বা বা মুখ গুণে মানুষ দুনিয়া আখিরাতে সম্মানিত হয় অথবা অপমানিত হয়।রমজান শেষ আর ক’দিন পরে ঈদ-উল-ফিতর আসবে এবং এ দিন পরস্পর পরস্পরকে আপন করে নেয়ার, ভেদাভেদ ও শত্রুতা ভুলে সবাইকে আলিঙ্গন করার যে শিক্ষা তাও মাহে রমজান থেকে নির্গত। ঈদের খুশি তো রোজাদারের জন্য। যারা রমজানকে সদ্ব্যবহার করেছে তাদের জন্য