ডেস্ক নিউজ:
ছয় বছর পর প্রকাশক দীপন হত্যা মামলায় আট আসামির সবার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ পলাতক রয়েছেন দুজন। আদালত পর্যবেক্ষণে জানান, মুক্তমনাদের হত্যা করে দেশকে অস্থিতিশীল করাই ছিল জঙ্গিদের উদ্দেশ্য। যারা বই প্রকাশের জন্য মানুষ হত্যা করতে পারে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের শত্রু। ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাপ্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারী অপরাধীরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহিত হবে। অভিযুক্ত আসামিরা আনসার আল ইসলামের সদস্য হিসেবে সাংগঠনিকভাবে ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যাপ্রচেষ্টায় অংশগ্রহণ করে, সেজন্য তাদের একই সাজা দেওয়া বাঞ্ছনীয়। মামলার সব আসামির সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং এটা হবে একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
আদালত থেকে আসামিদের বের করার সময় তাদের চোখেমুখে ছিল না কোন অনুতাপ।
এদিকে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছে দীপনের পরিবার।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোর কুপিয়ে হত্যা করা হয় জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপনকে। ঘটনায় প্রায় ৬ বছর পর এ রায় হলো এ মামলার।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম সারোয়ার জাকির বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে মুক্তমনাদের হত্যা করে কণ্ঠরোধ করা এবং দেশকে অস্থিতিশীল করাই ছিল জঙ্গিদের উদ্দেশ্য।
জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান তার মন্তব্য তুলে ধরেন এভাবেই।
আদালত বলেন, ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে একদিকে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়রা মানসিক শান্তি পাবেন, অন্যদিকে ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে অন্যরা ভয় পাবে এবং নিরুৎসাহিত হবে। প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার কারণ সম্পর্কে রায়ে বলা হয়, লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকদের হত্যার অংশ হিসেবে অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশের জন্য জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক দীপনকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। তার মূল কাজ ছিল জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মূল হত্যাকারীদের অর্থায়ন করা। আর দীপন হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামি আকরাম হোসেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামি হলেন- মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির, আবদুস সবুর ওরফে আবদুস সামাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল রিফাত, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব সাজিদ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের, চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব। তাদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।
২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগ এলাকার আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে ফয়সল আরেফিন দীপনকে ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। অফিসের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
২০১৩ থেকে ২০১৬ তিন বছরে ৮ জন মুক্তমনা লেখক, ব্লগার ও প্রকাশকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এরমধ্যে শুধু গণজাগরণমঞ্চের কর্মী ব্লগাররাজীব হায়দার হত্যা মামলা রায় হয়েছে বিচারিক ও উচ্চ আদালতে।