গাজীপুর প্রতিনিধি:
তিন বছর ধরে গাজীপুর মহানগর ছাত্রীলীগের কমিটি নেই। গত ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী সম্মেলনের মাধ্যমে বিলুপ্ত করার পর থেকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি আর হয়নি। এর মধ্যে কয়েকবার কমিটি গঠনের গুঞ্জন শুনা গেলেও তা কার্যকর হয়নি। সর্ব শেষ কিছু দিন আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলে জেলার নেতাকর্মীরা ভেবেছিলেন দ্রুতই তাদের কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হলেও গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি হচ্ছে না তিন বছর ধরে।
এদিকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে কারা নেতৃত্বে আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।নতুন কমিটিতে পদের আশায় নেতাকর্মীরা এতোদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে ধর্না দিলেও বারবার হতাশ হয়েছেন পদ প্রত্যাশীরা। অনেকের ছাত্রত্ব চলে গেলে তারা যুবলীগের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে।
অপর দিকে, ২০১৫ সালের ৩১ মে মো. দেলোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও জাহিদুল আলম রবিনকে সাধারণ সম্পাদক করে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় । পরে ২০১৬ সালের ২২ মে জেলা ছাত্রলীগের ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সে কমিটির মেয়াদ প্রায় ছয় বছর হলেও সেখানেও নতুন কমিটি হচ্ছে না। জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও দ্রুততম সময়ে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির দাবি জানিয়েছেন।
মহানগর ছাত্রলীগের নেতারা জানান, ২০১৩ সালের ১১ অক্টোবর মাসুদ রানা এরশাদকে সভাপতি ও তৌহিদুল ইসলাম দীপকে সাধারণ স¤পাদক করে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে সোহাগ-নাজমুলের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটি। এর প্রায় এক বছর পর ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির মেয়াদ দেওয়া হয় এক বছর। কিন্তু কমিটি মেয়াদ শেষ হয়ে ২০১৮ সালের পাঁচ ফেব্রুয়ারী মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন হলেও তিনি বছরে ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
পরে ২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুদ রানা এরশাদকে সভাপতির পদ থেকে অব্যহতি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন। সে সময় গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মহানগর কমিটির সহসভাপতি ইকবাল হোসেনকে। তার সভাপতিত্বে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী গাজীপুরে সম্মেলনের মাধ্যমে আগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর মহানগর ছাত্রলীগের পদ প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু জীবনবৃত্তান্ত যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও কমিটি দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর থেকে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। অবশ্য ৫ ফেব্রুয়ারী সম্মেলনের দিন জানানো হয়েছিল, দু-একদিনের মধ্যেই নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। সেই দু-একদিন এখন তিন বছর পেরিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে পদপ্রত্যাশী অনেক ছাত্রলীগ নেতা বলছেন, গাজীপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের কমিটি না দিয়ে সংগঠনকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। মহানগর কমিটির পাশাপাশি ভাওয়াল কলেজ শাখা, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ শাখা ও টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটিও হচ্ছে না প্রায় তিন বছর ধরে। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে পদ পাওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে জোর তদবির চালিয়েছিল। নতুন কমিটি এসে সেসব নেতাদের মূল্যায়ন করবেন কি না সে বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন নেতাকর্মীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী একাধিক প্রার্থী বলেন, ‘নানা জটিলতায় এখনো মহানগর ছাত্রলীগের নেতৃত্বের জন্য নতুন কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি। নেতারা শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কিন্তু কবে ঘোষণা করবে কমিটি তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’পদ পেতে অনেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতারা জানান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের আর প্রয়োজন নেই। যার কারণে ছাত্রলীগকে দাবিয়ে রাখা হচ্ছে। ছাত্রলীগকে হয়তো নেতারা দলের জন্য বোঝা মনে করেন।
নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী মিনহাজুল আবেদীন মাসুম বাবু বলেন, মহানগর ছাত্রলীগ এখন অভিভাবক শুণ্য। দীর্ঘ দিন গাজীপুর মহানগর কমিটি নেতৃত্বশূন্য থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। অনেকে দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্ররাজনীতি করছেন কিন্তু কোন পদপদবী পাচ্ছেন না। অনেকে ছাত্রত্ব হারিয়ে ফেলছেন। ফলে অনেককেই হতাশা নিয়েই ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হবে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, দেশরত্ন শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অভিভাবক। আশা করছি গাজীপুরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে শীঘ্রই মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি করা হবে।