একটি খাল পাল্টে দিলো হাজার মানুষের ভাগ্য। নিষ্ফলা মাঠ ভরে উঠলো সবুজ ফসলে। হাওয়ায় হাওয়ায় ফসলের দোলায় বদলে গেল জনপদের চিত্র। বলছিলাম নরসিংদীর পলাশ উপজেলা দিয়ে বয়ে চলা বাংলাদেশ সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের পাকা খালের গল্প। একসময় এ অঞ্চলের মানুষের অভাব-অনটনের সাথে ছিল নিত্য লড়াই। কোনো সেচ ব্যবস্থা না থাকায় শুষ্ক মৌসুমে মাঠ থাকত নিষ্ফলা। বর্ষায় ফসলি জমি তলিয়ে যেতো পানিতে। ফলে দুঃখী মানুষের জীবিকা নির্বাহের উপায় ছিল পদ্মা পাতা, শাপলা, শালুক তুলে বিক্রি কিংবা কুলা-ডালা ও হাঁড়িপাতিল তৈরিতে।
সেই দুঃসময়ে পলাশ উপজেলার হাজারও দরিদ্র মানুষের জন্য সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের পাকা খালটি নির্মাণ হওয়ায় পানির সমস্যা দূর হয়ে বদলে যায় এখানকার মানুষের ভাগ্যের চাকা। কিন্তু লোভে এমন এক দানব, যা নিমিষে বন্ধ করে দিতে পারে ভাগ্যের চাকা, সুখের দিনে লেপ্টে দিতে পারে অন্ধকার।
পলাশে বাংলাদেশ সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের পাকা খালটিও কতিপয় লোভীর লেলিহান জিহ্বা থেকে রেহায় পায়নি। এক সময়ের হাজারও মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেওয়া খালটি এখন প্রতিনিয়তই অবৈধ দখল-ভরাট করে নিচ্ছে একটি মহল। সরকারি এ খালটি যেনো ওই মহলটির পৈতৃক সম্পত্তিতে রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্প কর্তৃপক্ষের খেয়ালিপনায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে এ খালটি। খালটিতে হাজারও ছিদ্র করে দু’পাশে গড়ে ওঠা বাসা-বাড়ির ময়লা-আর্বজনা প্রতিনিয়ত এ খালে ফেলা হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে খালের ওপরে দিয়ে ছোট ছোট ব্রীজ করা হয়েছে। যে যার মতো খালের ওপরই বাড়ি-ঘর নির্মাণ করছে। যেনো এসব বিষয়ে দেখার কেউ নেই।
এ খালটি ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে পলাশ নতুন বাজার এলাকার পাশ দিয়ে গড়পাড়া, দড়িহাওলা পাড়া, আতশী পাড়া হয়ে ‘শালদা’র খালে গিয়ে মিশেছে। এ খালের বিভিন্ন সংযোগ রয়েছে। কুঠির পাড়া, গোরায়ের পাড়া, রাবান, কুড়াইতুলি সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে রয়েছে এ খালের বিস্তার। এই খালে রয়েছে অসংখ্য সুইচ গেইট। ১৯৯২ সালে পলাশ উপজেলায় কৃষি জমির উপকরণ হিসাবে সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের সুবিধার্থে খালটি কেটে পাকা করার উদ্যোগ নেয় সরকার। আগে এর দু’পাশে কোনো বাড়ি-ঘর ছিল না। সেচ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী খালের দুই পাশে ছয় ফুট করে ১২ ফুট জায়গা ফাঁকা ছিল। যাতে করে খালের দেয়ালে মাটির কোনো প্রকার চাপ না পড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে খালটির দুই পাশের মাটি ভরাট করে বাড়ি-ঘর সহ বহুতল ভবন গড়ে ওঠে। অবৈধ দখলে চলে যায় খালটির ১২ ফুট জমি।সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এ খালের দু’পাশে এক হাত জমিও খালি নেই। যে যার মতো দখল-ভরাট করে নিয়েছে।
আশিকুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বাংলাদেশ বুলেটিনকে এ প্রতিবেদককে জানান, এক সময় এ খালের পানিতে এলাকার হাজারও মানুষ অজু-গোসল করতো। পানি ছিল খুব পরিষ্কার। বর্তমানে বাথরুমের ময়লা পানি, ঘোড়াশাল পৌর এলাকার বাসা-বাড়ির ময়লা-আর্বজনার স্তুপ জমে পানি নিষ্কাশন ব্যাঘাত ঘটছে এবং খাল অর্ধেকের চেয়েও বেশি ভরাট হয়ে গেছে।শুধু তাই নয়, এ খালটি এখন এডিস মশা তৈরির কারখানাই বলা যায়।তাই অতি দ্রুত এ খালটি রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি করেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে পলাশ উপজেলা সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, ইতোমধ্যে খালটি রক্ষায় সামাজিক সচেতনা বৃদ্ধি করার জন্য মাইকিং, লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।তাছাড়াও খালটি রক্ষায় স্থানীয়দের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিনের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, উপজেলা সেচ ইরিগ্রেশন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে খালটির সম্পর্কে ভালো করে জেনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।