গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কুকুর-বিড়ালের অবাধ বিচরণসহ অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে রোগীদের। তবে এসব অভিযোগ স্বীকার করলেও কর্মী স্বল্পতার অজুহাত দেখাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে রোববার দুপুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচ তলার টিকিট কাউন্টারে বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরঘুর করছে। কেউ কেউ ভয়ে কুকুরটিকে এড়িয়ে দূর দিয়ে চলাচল করছে।
কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের পুরানো ভবনের ভেতরে মহিলা ওয়ার্ডের যাওয়ার পথে আরেকটি কুকুর দ্বিতীয় তলায় ওঠার চেষ্টা করতে দেখা যায়। এ কুকুরের গায়ে বড় এক ক্ষত থেকে থেকে দুগন্ধ ছড়াচ্ছে। কুকুরটির জন্য রোগীদের দোতলায় না উঠে একপাশে দাঁড়িয়ে অপক্ষো করতে দেখা যায়।এক সময় কুকুরটি সরে গিয়ে আরএমও’র কক্ষের পেছেন শুয়ে পড়ে। অপেক্ষমান রোগী ও তাদের স্বজনরা তখন দোতলায় ওঠেন।
এদিন হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় প্রশাসনিক বিভাগের সিঁড়িসহ নিচতলা থেকে উপর তলা পর্যন্ত ময়লা জমে থাকতে দেখা যায়। দোতলায় কেন্টিনের পশ্চিমপাশের দেয়ালে এবং ছাঁদে মাকড়সার জাল ঝুলে রয়েছে। কয়েক মাস সেখানে ঝাঁড়ুর কোনো স্পর্শ না পড়াটা স্পষ্ট বোঝা যায়।
সেদিন তিনতলায় পরিচালকে এবং উপ-পরিচালককে পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন জানান তারা ছুটিতে রয়েছেন। তার কক্ষের পাশে সহকারী পরিচালকের কক্ষেও তালা ঝুলতে দেখা গেছে।
স্টোর অফিসার নাজিম উদ্দিনকে এ ভবনে কুকুর ও ময়লা দেখালে তিনি এক নিরাপত্তা কর্মীকে ডেকে শাসিয়ে তার কক্ষে চলে যান। তবে আধাঘন্টা পরও ওইসব ময়লা এবং কুকুর সরানোর কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
গাজীপুর মহানগরের যোগীতলা মহল্লার নিবাসী সুমি আক্তার জানান, তার ১৮ মাসের শিশুর চিকিৎসা নিতে পুরাতন ভবনের নিচতলার উত্তর পাশের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করান।
পাঁচ দিন ধরে এ হাসপাতালে অবস্থান করা সুমি বরেন, আমার বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। হাসপাতালে রোগীর বিছানায় কিংবা খাটের নিচে শুয়ে বিড়াল। সুযোগ পেলে রোগীদের প্লেটের খাবার খেয়ে ফেলছে।
“সময় সময় তারা বমি এবং পেসাব করে দিচ্ছে কিন্তু এ নিয়ে হাসপাতালের কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।”
গাজীপুর সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকা থেকে আসা ফারুক মিয়া জানান তার ছোট বোন সোহানা (৫) চিকিৎসা নিতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ২২ নম্বর বেডে ভর্তি করিয়েছিলেন। তিনি অবাক হয়েছেন ‘এত সুন্দর’ হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনার দূরাবস্থা দেখে। তিনি বলেন, এসব কুকুর-বিড়াল হাসপাতালের উন্মুক্ত ডাস্টবিনে ঘোরে। সেখান থেকে জীবাণু নিয়ে বিছানায় ওঠে, খাবারে মুখ দেয়। এতে জীবাণু ছড়াতে পারে।
এ বিষয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান জানান, ৫০০ শয্যার এ হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৩৬ জন এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে ৪২ জন আনসার রয়েছেন।
“পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকটে স্বেচ্ছাশ্রমেরর ভিত্তিতে কাজ করাতে হচ্ছে। ফলে এ ক্ষেত্রে কিছুটা ত্রুটি রয়েছে।”
তবে হাসপাতালের ভেতরে বেড়াল-কুকুর ঘোরাফেরার বিষয়টি নিরাপত্তাকর্মীদের গাফিলতি বলে স্বীকার করে তিনি জানান, এ ব্যাপারে আনসার কমান্ডারকে শো’কজ করা হবে।