ডিম পাড়া মুরগির খাদ্য তালিকায় এবার যোগ হচ্ছে ডিমের খোসা। উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসায় শুধু ক্যালসিয়ামই নয় অল্প পরিমাণে প্রোটিনও থাকে, যা মুরগির খাদ্যে ব্যবহারে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ডিম উৎপাদন ও ডিমের গুণগত মানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে না।
গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. আমিনুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, পোল্ট্রি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৬০-৬৫ ভাগ খরচ হয় শুধু খাদ্যের জন্য। ডিমের খোসায় ৯৪ ভাগ ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ১ ভাগ ক্যালসিয়াম ফসফেট, ১ ভাগ ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট এবং ৪ ভাগ জৈব পদার্থ থাকে। ঝিনুকের খোসা থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম কার্বনেটের মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং মারকারী জাতীয় পদার্থের মতো কিছু বিষাক্ত পদার্থ থাকে। ডিমের শক্ত খোসা গঠনের জন্য ডিমপাড়া মুরগির খাদ্যে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য।
যদি খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম না থাকে, মুরগি তার শরীরের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নিয়ে ডিমের খোসা গঠন করে। এজন্য ডিমপাড়া মুরগির খাদ্যে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম সরবরাহ করা আবশ্যক। উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ক্যালসিয়ামের একটি উত্তম উৎস যা মুরগির খুবই পছন্দনীয় খাদ্যোপাদান, এমনকি ক্যালসিয়ামের অন্যান্য উৎস লাইমস্টোন,
শামুক বা ঝিনুক ভাঙার চেয়েও অধিক বেশি পছন্দ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্র্যান্ডপ্যারেন্ট, প্যারেন্ট স্টক ফার্ম, হ্যাচারী, প্রতিদিন মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন হয়।
কাজেই রেস্টুরেন্ট, হ্যাচারী, কিচেন এবং ডিমজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরি হতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিমের খোসা উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এ উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসাতে শুধুমাত্র ক্যালসিয়ামই নয় এমনকি অল্প পরিমাণে প্রোটিনও থাকে
যা মুরগির খাদ্যে ব্যবহারে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ডিম উৎপাদন ও ডিমের গুণগত মানের উপর প্রভাব বিস্তার করে না।
প্রফেসর ড. মো. আমিনুল ইসলাম জানান, ডিমের খোসা সংগ্রহের পর পরিষ্কার পানিতে ধৌত করে গরম পানিতে কয়েক মিনিট ফুটাতে হয়। তারপর সূর্যের আলোতে শুকিয়ে গ্রাইন্ডিং মেসিনের সাহায্যে গ্রাইন্ডিং করে প্যাকেটজাত বা সংরক্ষণ করা হয় এবং পরবর্তীতে মুরগির খাদ্যে ব্যবহার করা হয়।
অতি সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৮ ভাগ উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহার করে ডিমপাড়া মুরগির খাদ্য খরচ হয়েছে প্রতি কেজিতে ২৭.৬০ টাকা মাত্র যেখানে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি বাজারজাত প্রতি কেজি খাদ্যের দাম ৩৫-৪০ টাকা।
সম্প্রতি গবেষণার খাদ্যমান মূল্যায়নে দেখা গেছে যে, কিচেন ও হ্যাচারী উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসায় আছে যথাক্রমে, ৯৮.৫২ ভাগ ও ৯৯.২০ ভাগ ড্রাইমেটার এবং ১.৪৮ ভাগ ও ০.৮০ ভাগ আর্দ্রতা। লাইমস্টোন ও ঝিনুক ভাঙাতে আছে যথাক্রমে; ৯৯.৬০ ভাগ ও ৯৯.৫১ ভাগ ড্রাইমেটার এবং ০.৪০ ও ০.৪৯ ভাগ আর্দ্রতা।
তাছাড়া কিচেন উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসাতে আছে যথাক্রমে, ৪.২৪ ভাগ প্রোটিন, ২৯.৭৫ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং ১৪.৮২ ভাগ ফসফরাস, এবং হ্যাচারী উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসাতে আছে যথাক্রমে ১৩.৮০ ভাগ প্রোটিন, ২৫.৫৩ ভাগ ক্যালসিয়াম এবং ১৩.৮৭ ভাগ ফসফরাস। তবে লাইমস্টোন ও ঝিনুক ভাঙাতে আছে শুধুমাত্র ৩৭.১২ ভাগ ও ৩৫.২০ ভাগ ক্যালসিয়াম।
মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৮ ভাগ উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহারে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডিম উৎপাদন (৩১৪ ডিম/বৎসর) ও লাভ (৩২.৩৯ টাকা/ডজন) হয় এবং সর্বনিম্ন উৎপাদন খরচ (৬৯.৬১ টাকা/ডজন) হয়।
এ ক্ষেত্রে পরবর্তী অবস্থানে আছে যথাক্রমে, ৮ ভাগ লাইমস্টোন ও ৮ ভাগ ঝিনুক ভাঙা। তবে লিপিড প্রোফাইল ধারণের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ডিমপাড়া মুরগির খাদ্যে, লাইমস্টোন বা ঝিনুক ভাঙা ব্যবহারের চেয়ে উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহারে ডিমের খোসার ভঙ্গুরতা শক্তি (৩.৭৭ কেজি/ডিম) অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়।
তিনি বলেন, ডিম উৎপাদনকারী মুরগির খাদ্যে উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা বিশেষ করে ৮ ভাগ উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসার ব্যবহার নিরাপদ, উচ্চগুণসম্পন্ন ও লাভজনক ডিম উৎপাদনে খুবই ফলপ্রসূ হবে বা সুফল বয়ে আনবে।