ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত (WHO REPORT ON GLOBAL TRANS FAT ELIMINATION ২০২০) প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে ১৫টি দেশে, যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
প্রতিবেদনে বলা হয় , বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদরোগে যত মানুষ মারা যায় তার ৪.৪১ শতাংশের জন্য দায়ি ট্রান্সফ্যাট। ১৫টি দেশের তালিকায় থাকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লাটভিয়া ও স্লোভেনিয়া ইতোমধ্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত সর্বোত্তম নীতি গ্রহণ অর্থাৎ সকল ফ্যাট, তেল এবং খাবারে প্রতি ১০০ গ্রাম ফ্যাটে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ পরিমাণ ২ গ্রামে সীমিত করা, অথবা পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল- পিএইচও’র উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
বাকি ১১টি দেশ বাংলাদেশ, ইরান, ভারত, মেক্সিকো, নেপাল, পাকিস্তান, কোরিয়া, মিশর, আজারবাইজান, ভুটান,
ইকুয়েডরকে দ্রুতততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়ে ডব্লিউএইচও প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো বলা হয় এ পর্যন্ত মোট ৫৮টি দেশ ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের নীতি গ্রহণ করেছে। যার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে ৩.২ বিলিয়ন মানুষ সুরক্ষা পাবে।তবে নীতিমালার অভাবে এখনও ১০০ টির অধিক দেশ ট্রান্সফ্যাট ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) পাঠানো এসংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়, এই বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘এমন একটা সময় যখন গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ে লড়াই করছে এবং আমাদের অবশ্যই একইসাথে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
এরমধ্যে অবশ্যই অসংক্রামক রোগ মোকাবেলার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহনের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, কারণ করোনাভাইরাসে এগুলো আরও তরান্বিত হয়ে অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ড. টেড্রস আরো বলেন, “২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্সফ্যাট মুক্ত বিশ্ব অর্জনের যে লক্ষ্য রয়েছে তাতে আমাদের কোনাভাবেই বিলম্ব করা যাবে না।”
রিজলভ টু সেইভ লাইভস (আরটিএসএল) এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও ডা. টম ফ্রিডেন বলেন, “বিশ্ব জুড়ে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে দেশসমূহ জনস্বাস্থ্যের জন্য সাশ্রয়ী পন্থা খুঁজছে। খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট মুক্ত করার মাধ্যমে একইসাথে জীবন ও অর্থ দুটোই বাঁচবে এবং সেইসাথে হৃদরোগ প্রতিরোধের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার উপর চাপও কমানো যাবে।”
উল্লেখ্য অতিসম্প্রতি ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও (পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল) ব্র্যান্ডসমূহের নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্স ফ্যাটি এসিড) পেয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের গবেষকরা। গবেষণায় ঢাকার পিএইচও নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০.৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে, যা ডব্লিউএইচও এর সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি।
প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) পরিচালক এবিএম জুবাইয়ের বলেন, বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। এমতাবস্থায়, দ্রুতততম সময়ের মধ্যে সবধরনের ফ্যাট, তেল এবং খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটের সর্বোচ্চ সীমা মোট ফ্যাটের ২ শতাংশ নির্ধারণ এবং তা কার্যকর করা জরুরী।