গত আট দিনে যশোরে চার জন খুন হয়েছেন। এরমধ্যে যশোরের চৌগাছায় পরকীয়া, অভয়নগরে মুক্তিপণ দাবি, যশোর শহরে মাদক ব্যবসা ও সদর উপজেলায় পাওয়া টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে খুনের ঘটনাগুলো ঘটে বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশ ২টি ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে আটক করেছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, খুনের ঘটনাগুলো সোশ্যাল ক্রাইম। ফলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির কারণ মনে করছি না।শুক্রবার (৫ জুন) সকালে শুক্রবার চৌগাছা থানা পুলিশ উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর বাঁওড়ের নাটনার খাল এলাকা থেকে বিপুল হোসেন (৪২) নামে এক যুবকের বস্তাবন্দি অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, নিখোঁজের দুই দিন পর তার মৃতদেহ দেখতে পেলেন তারা। বিপুল স্বরুপদাহ ইউনিয়নের ছোট কাকুরিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শামসুল হকের ছেলে।
চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রিফাত খান রাজীব নিহত পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, বুধবার প্রতিবেশী সবুজ ও তার দুলাভাই রফিকুল গরু কিনতে যাওয়ার কথা বলে বিপুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে বিপুল নিখোঁজ ছিলো। শুক্রবার তার বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ওসি আরো জানান, ধারণা করা হচ্ছে সবুজের মায়ের সাথে পরকীয়ার জেরে সবুজ ও তার দুলাভাই রফিকুল মিলে বিপুলকে হত্যা করেছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের আটকে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) অভয়নগরে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত কলেজছাত্র নুরুজ্জামান বাবুর (২০) মৃতদেহ পুড়াখালী বাঁওড়ের কচুরিপনার নিচ থেকে উদ্ধার হয়। বাবু পুড়াখালী গ্রামের ইমরান গাজীর ছেলে। তিনি উপজেলার ধোপাদী এসএস কলেজ থেকে এবারের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। স্বজনরা জানিয়েছেন, গত সোমবার রাতে প্রতিবেশী রিফাত হোসেন আউশ তাকে ফোন করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে বাবু নিখোঁজ ছিলেন। পরের দিন বিকেলে পিতা ইমরান গাজী অভয়নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। রাতে নুরুজ্জামানের মোবাইল নম্বর থেকে ইমরান গাজীকে ফোন করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পুরিশ ঞটনাটি জানেতে পেরে অপহরণকারী সন্দেহে রিফাত হোসেন আউশ (১৯) ও আবদুর রাজ্জাককে (৫৫) আটক করে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কচুরিপনার মধ্যে থেকে বাবুর মৃতদেহ উদ্ধার হয়। হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে পুলিশ আউশ ও রাজ্জাককে আদালতে প্রেরণ করে। আদালত তাদের দুইজনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
শুক্রবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় যশোর স্টেডিয়ামপাড়ায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নির্মাণ শ্রমিক আল-মামুন (২৯) খুন হন। তিনি খড়কী স্টেডিয়ামপাড়ার বুলুর বাড়ির ভাড়াটিয়া আবুল বাশারের ছেলে। মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ তাকে খুন করে। এ ঘটনায় নিহতের পিতা ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতয়ালি থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (অপারেশনস) শেখ আবু হেনা মিলন জানান, এই পর্যন্ত পুলিশ ৪ আসামিকে আটক করেছে। তারা হলো শহরের ধর্মতলার ওহেদ আলীর ছেলে সিয়াম ওরফে ব্লাক সিয়াম, ধর্মতলা কদমতলার আসাদের ছেলে মাহিম খড়কি কলেজপাড়ার মৃত রবিউল ইসলামের ছেলে ইসমাইল স্টেডিয়ামপাড়ার বিপ্লব। ৪ জনের মধ্যে ৩ জন খুনের সাখে জড়িত বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। অন্য আসামিদের আটকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।
৩০ মে (শনিবার) যশোর সদর উপজেলার মনোহরপুর যোগীপাড়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে রুবেল হোসেন (২৮) এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে জখম করে দুর্বৃত্তরা। তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনায় রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ৩১ মে মারা যান রুবেল। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। ১ জুন নিহতের পিতা বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। পাওনা টাকা চাইতে গেলে আসামিরা তাকে ছুরিকাঘাত করে। খুনের ঘটনায় এখনো কোন আসামিকে আটক করতে পারিনী পুলিশ। এসব বিষয়ে কথা হলে কোন মন্তব্য করেননি যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) গোলাম রব্বানী শেখ জানিয়েছেন, যশোরের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। চরমপন্থি, সন্ত্রাসী বা ছিনতাইকারীদের হাতে আপাতত কোন খুনের ঘটনা নেই। এছাড়া রাজনৈতিক কোন্দলে কেউ খুন হচ্ছেনা। গত ৮ দিনে যশোর জেলায় ৪ জন খুন হয়েছেন সেগুলো সোশ্যাল ক্রাইমের কারণে। সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এর জন্য দায়ী। এখানে পুলিশের কি করার আছে। তারপরেও ঘটনাগুলো গুরুত্বের সাথে দেখছে।